চলতি মৌসুমে প্রথম পর্যায়ের বন্যায় প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। সোমবার (২০ জুলাই) সচিবালয় থেকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও তা উত্তরণে করণীয় বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই হিসাব দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
চলতি মৌসুমে তিন সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বন্যার মুখোমুখি হয়েছে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল। ১৮ জেলার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ২৬ লাখ মানুষ দুর্গতিতে পড়েছে।
কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, “বন্যায় আউশ, আমন, সবজি, পাটসহ বেশ কিছু ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিকল্প বীজতলা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে বিকল্প ফসলের চাষের ব্যবস্থা, নিয়মিতভাবে আবহাওয়া মনিটরিংসহ প্রস্তুতি চলছে যাতে করে বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি মোকাবেলা করা যায়।”
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির আর অবনতি না হলে কৃষি মন্ত্রণালয় যেসব কর্মসূচি নিয়েছে তাতে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যাবে এবং আমনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।”
সভায় জানানো হয়, প্রথম পর্যায়ে ২৫ জুন হতে ৯ জুলাই পর্যন্ত অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যায় রংপুর,গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল জেলাসহ ১৪টি জেলায় ১১টি ফসলের প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকা। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার জন।
দ্বিতীয় পর্যায় ১১ জুলাই হতে ১৯ জুলাই পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, বগুড়া, টাংগাইল, নাটোর, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ২৬টি (আগের ১৪টিসহ) জেলায় ১৩টি ফসলের প্রায় ৮৩ হাজার হেক্টর আক্রান্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ এখনও নিরূপণ হয়নি।
বন্যায় ফসলহানি নিয়ে সোমবার সচিবালয় থেকে তৃণমূল কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।বন্যায় ফসলহানি নিয়ে সোমবার সচিবালয় থেকে তৃণমূল কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সভায় জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত এবং ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, নতুন করে ২৩ জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কেন্দ্র আভাস দিয়েছে, টানা বর্ষণ ও উজানে ঢলে পানি বাড়তে থাকায় জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ঢাকা জেলার আশপাশের নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমনের বীজতলার জন্য দ্রুত বিকল্প বীজতলা তৈরির জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী।
কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে-
অধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে কৃষকের জমিতে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকার কমিউনিটিভিত্তিক রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচি।
প্রায় ৭০ লাখ টাকার ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন কর্মসূচি।
৫৪ লাখ টাকার মাধ্যমে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য ট্রেতে নাবী জাতের আমন ধানের চারা উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমন চাষ সম্ভব না হলে ৫০ হাজার কৃষকের মাঝে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার মাষ কলাই বীজ ও সার দেয়া হবে।
এ অনলাইন সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) আবদুর রৌফ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাজিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, বিএডিসির চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল ও জেলাগুলোর কৃষি কর্মকর্তারাও যুক্ত ছিলেন।