চলতি বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতির দায়িত্ব পান ডিসি ও ইউএনওরা। সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলছিলো এতোদিন। তবে বিপত্তি বাধে গত ১৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তে। বেশ ধকলে পড়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠনের কথা বলা হয় এবং একইসঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে নিয়মিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এই আদেশের ফলে আগের কোনো কমিটিই কার্যকর থাকলো না।
মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি ও মাঠ প্রশাসনের কর্তারা। তারা বলছেন, বারবার কমিটি ভাঙা গড়ার খেলায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের সর্বনাশ হচ্ছে। নিয়োগেও সমস্যা। সৃষ্ট বিড়ম্বনার দ্রুত সমাধান করার দাবি জানান তারা।
একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়েই পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, এর মধ্যে আবার নতুন সিদ্ধান্ত ভোগান্তির সীমা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সব থেকে বড় সমস্যা হলো, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন নতুন অ্যাডহক কমিটি করতে ঝক্কি-ঝামেলার সঙ্গে গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক দৈন্যতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ একটি কমিটি গঠনে নানা খরচসহ দৌড়ঝাপ করতে হয় তাদের।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের বিপ্লবে সরকার পতনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০ আগস্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব ডিসি-ইউএনওরা পায়। সে অনুযায়ী তারা তাদের মনোনীত প্রতিনিধি ও যথাসম্ভব নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা কমিটি থাকার কথা নয়। আমি বলেছিলাম, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পুরো কমিটিকেই বাতিল করতে, কিন্তু কোনো কারণে বোধহয় শুধু সভাপতিকে বাতিল করা হয়েছে। আসলে পুরো কমিটিকেই বাতিল করার কথা, কারণ এগুলো তো সবই রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা কমিটি।
এদিকে উপজেলা পর্যায়ে গঠিত সব কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রেখে অন্যান্য সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে দাখিল করা হয়। শিক্ষা বোর্ডও কমিটি অনুমোদন দেয়। এই প্রক্রিয়ায় অনেক নিয়মিত কমিটি গঠিত হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কমিটি গঠন করতে না পেরে ইউএনওকে সভাপতি করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে।
এর মধ্যেই ১৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশে হতাশ হয়েছেন শিক্ষক- কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা। আগস্টের পর সদ্য গঠিত ও অনুমোদিত কমিটি এমনকি যেখানে অ্যাডহক কমিটি আছে সেখানেও আবার অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংশ্লিষ্টরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, একটা কমিটি গঠন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নানারকম ঝামেলা পোহাতে হয়, কাঠখড় পোড়াতে হয়। কমিটি অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডে ৩ হাজার হাজার টাকা ফি বাবদ দিতে হয়।
তারা বলেন, এমনিতেই গ্রামীণ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক দৈন্যতা আছে। শিক্ষার্থীরা মাসিক বেতন সেশনচার্জ দেয় না বললেই চলে। শিক্ষকদের বেতন থেকে চাঁদা তুলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হয়। তার ওপর বারবার কমিটি গঠন তাদের জন্য কষ্টের।
তারা আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক যতবেশি প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবেন বা সময় দেবেন শিক্ষার মান ততো বাড়বে, প্রতিষ্ঠান ভালো চলবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নানা প্রয়োজনে অফিস আদালতে ঘুরতে বাধ্য করা হয় তাহলে মূল কাজ হয় না।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, বর্তমানে সবগুলো কমিটির সভাপতি হিসাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন। যদি প্রয়োজন হয় তাকে সরিয়ে অন্য একজন যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে, অথবা সদস্যদের ভোটে সভাপতি নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন কোনো সমাধান নয়।
কমিটি গঠন প্রক্রিয়া: কমিটি গঠনের জন্য ইউএনওর কাছে আবেদন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়ে তপশিল ঘোষণা করতে হয়। এরপর সভাপতি নির্বাচন। সব কাজ শেষে অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাপ করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। অনেক ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তার খপ্পরে পড়তে হয়, দিতে হয় বাড়তি টাকা। এর পর অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত গঠন হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।