সিফাত-শিপ্রার মুক্তি চেয়ে স্বজনদের আকুতি - দৈনিকশিক্ষা

সিফাত-শিপ্রার মুক্তি চেয়ে স্বজনদের আকুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আমার মেয়ের তো কোনো দোষ ছিল না। সে সবসময়ই চুপচাপ স্বভাবের। নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ তো অনেক পরের কথা। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শিপ্রার বাবা বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা নবকুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, শিপ্রা পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদ করেছিল কেন মেজর সিনহাকে শ্যুট করা হয়েছে। এগুলোই হয়তো আমার মেয়ের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে! হয়তো এটাই তার অপরাধ! আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে ঘটনাস্থলে ছিল না। সে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি সে অনলাইনে পরীক্ষাও দিয়েছে। সে যদি অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতো তাহলে এতদিন ওখানে থাকতে পারতো না। ফিল্মের কাজের জন্য জুলাই মাসের তিন তারিখ মেজর সিনহাসহ ওরা চারজন কক্সবাজারে যায়। তারা তিনজনই শিক্ষার্থী। একসঙ্গে লেখাপড়া করে এবং সিনেমার কাজ করে। ৩০ জুলাই রাতে সিনহাকে অস্বাভাবিকভাবে গুলি করে মারা হয়। এবং আমার মেয়ে তখন রেস্ট হাউজে ছিল। ঘটনার দিন রাত ২টায় তার রেস্ট হাউজে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। এবং অবৈধভাবে তাকে গ্রেফতার করে। আমার মেয়ে প্রতিবাদ করেছিল ‘কেন আপনারা খুন করলেন তাকে। কি অপরাধে খুন করেছেন’।

এরপর শিপ্রাকে মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। ওর সঙ্গে তাহসিন রিফাত নূর নামে আরেক শিক্ষার্থী ছিল। পুলিশ সদস্যের আত্মীয় হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়। আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে। আমার মেয়ের সম্পর্কে আমিতো জানি। কারণ আমি একজন সাবেক বিজিবি কর্মকর্তা হিসেবে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানি। বাবা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে বলতে চাই, আমার মেয়েকে এই ধরনের চক্রান্ত থেকে রেহাই দেন।

তিনি বলেন, ঈদের দিন সর্বশেষ শিপ্রার সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন থানায় ছিল। কিন্তু আমাকে কিছুই জানায়নি। একাধিকবার ফোন দেয়ার পর সে আমাকে জানায়, আমি ভালো আছি। চিন্তা করোনা। একটা সমস্যায় আছি। তখন জানতে চাই কি সমস্যা। আমি হার্ট ও স্পাইনাল সমস্যায় ভুগছি। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে অবসরে এসেছি। শিপ্রার গ্রেফতারের বিষয় গণমাধ্যমের বরাতে ৩ আগস্ট জানতে পারি। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে বড়। ছোট ছেলে শুভজিত প্রান্ত শ্রেয় ভারতে আইটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে। শিপ্রার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা পূর্ণিমা দেবনাথ। পাঁচদিন ধরে শিপ্রার মায়ের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। স্ট্রোক করার মতো অবস্থা। ঢাকার রামপুরা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন শিপ্রা দেবনাথ।

শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর তারা তিনজন বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তাহসিন রিফাত নূরকে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে যখন সিনহা নিহত হন তখন সেখানে ছিলেন সিফাত। সরকারি কাজে বাধা দেয়া এবং হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সিনহার সঙ্গে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে। বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবৈধ মাদক জাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট এবং গাঁজা যানবাহনে নিজ হেফাজতে রেখেছে।

এদিকে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণআইনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিদেশি মদ, দেশীয় চোলাই মদ ও গাঁজা নিজ হেফাজতে রেখেছেন। পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, আত্মরক্ষার্থে মেজর সিনহাকে গুলি করার পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। সেটি খুঁজতে পুলিশ রিসোর্টে যায়।

ওদিকে সিফাতের স্বজনরাও দাবি করেছেন, পুলিশ নিজেদের রক্ষা করতে সিফাতের নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। যে জীবনে সিগারেট খায়নি সে মাদক নেবে এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

এদিকে চলচ্চিত্রকর্মী ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী শিপ্রা ও সিফাতের নিঃশর্ত মুক্তি ও নিরাপত্তা চেয়ে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা। এ সময় দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে পরিবারের সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তা, মেজর (অব.) সিনহা হত্যার সুষ্ঠু তদন্তসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মিলে এ মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, কক্সবাজারে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান নির্মমভাবে খুন হয়। তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে সেখানে অবস্থানরত তার সঙ্গে সহকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্স চিত্রগ্রাহক সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং নির্মাতা শিপ্রা রানী দেবনাথ। মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ত করে দু’জনকেই আটক করা হয়েছে। মানববন্ধনকারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সেই সঙ্গে আটক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তোলেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সহপাঠী সিফাত ও শিপ্রার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হওয়ায় মানববন্ধনে যুক্ত হয়েছি। সহপাঠীদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। তারা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সেই নিশ্চয়তার দাবি জানানো হয়।

ওদিকে গত বুধবার বরগুনার বামনা সরকারি সারওয়ারজান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিফাতের সহপাঠীরা মানববন্ধন করতে চাইলে স্থানীয় পুলিশের টহলের কারণে করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। যদিও থানার ওসি জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033540725708008