সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন - দৈনিকশিক্ষা

সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষিকার করা যৌন হয়রানির অভিযোগে নতুন করে তদন্তে নেমেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন আলাদা করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। 

এর আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পায় উপজেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। এরই প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করেছিল উপজেলা প্রশাসন। প্রধান শিক্ষক নোমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে ১৭ই জুলাই কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ ও ৩০শে জুলাই মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ওই শিক্ষিকা। 

অরও পড়ুন: যৌন হয়রানির হাতিয়ার প্রধান শিক্ষকের পরিবারতন্ত্র

এদিকে, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ১লা আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়। এরপর ২৯শে জুলাই উচ্চ আদালত থেকে এক মাসের জামিন নেন। 

সর্বশেষ ২৮শে সেপ্টেম্বর জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে চার্জশিট যাবার আগ পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান ওই প্রধান শিক্ষক। ওই প্রধান শিক্ষকের লাম্পট্য ও অনিয়মে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে নানা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ কালো টাকার জোরে নোমান আহমদ তদন্তকাজে নানাভাবে প্রভাবিত করাসহ কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ জেলা ও উপজেলার সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতাদের কাছে বারবার ধরনা দিচ্ছেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য।

তাদের সহযোগিতায় তিনি এমন সব কর্মকাণ্ড করে রেহাই পেয়েও যাচ্ছেন। জানা যায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৯ই সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় দ্বিতীয়বারের মতো তদন্তে  নেমেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা দে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ১লা আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদকে আহ্বায়ক, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মইনুল হক সদস্য ও কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ারকে সদস্য করে ৫ই সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

কিন্তু ওই সহকারী শিক্ষিকার পরিবার থেকে কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ারের প্রতি অনাস্থা জানানো হয় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে। এর প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা বিভাগ তাদের গঠিত তদন্ত কমিটি থেকে মো. আনোয়ারকে বাদ দিয়ে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়ার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত মো. আনোয়ারের সঙ্গে তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের রয়েছে সুসম্পর্ক। রয়েছে আর্থিক লেনদেনেরও সম্পর্ক। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছেন প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ। বিভিন্ন বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার। 

বিনিময়ে তিনি ওই প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। তারপরও দলীয় প্রভাব দেখিয়ে দাপট খাটিয়ে তিনি ওখানেই কর্মরত আছেন এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এলাকাবাসী জানান ৮ই আগস্ট বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্তে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ তদন্ত প্রতিবেদন তার পক্ষে নিতে কৌশল অবলম্বন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। 

তদন্ত চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক তার অনুসারী ও বহিরাগতদের বিদ্যালয়ে এনে তদন্ত কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করার জোর প্রচেষ্টাও চালান। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বহিরাগতদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এরপর ৯ই সেপ্টেম্বর ফের জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা বিভাগের তদন্ত শুরু হয়। প্রথমে জেলা শিক্ষা বিভাগ তদন্ত কাজ শুরু করে। এ সময় প্রধান শিক্ষক নোমান তার অনুসারীদের ও টাকার বিনিময়ে আরো কিছু ভাড়াটেদের বিদ্যালয়ে এনে রাখেন। 

যাতে তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। বিকালে তদন্তের জন্য বিদ্যালয়ে হাজির হন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা দে। এ সময় তিনি দেখতে পান বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুসারীরা সংঘবদ্ধভাবে বিদ্যালয়ের কক্ষে বসে আছেন। এ সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কাজ শেষ করে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন বলে এলাকাবাসী জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার বলেন, কোনো কারণে তাকে তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তা তিনি অবগত নন। নানা বিষয়ে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক নোমানের কর্মকাণ্ড থেকে তিনি অনেক দূরে আছেন। 

তিনি প্রধান শিক্ষককে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেন নি। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয় বলেও জানান। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ মুঠোফোনে বলেন, চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। আর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ারের প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ ও সহকারী শিক্ষিকার পরিবারের পক্ষ থেকে অনাস্থা থাকায় তাকে চিঠি দিয়ে তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। 

জেলা প্রশাসনের তদন্তের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা দে বলেন, এ বিষয়ের ঘটনা তদন্তনাধীন। পুরোপুরি তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি। ১ম ও ২য় ধাপের তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। আরো তদন্ত হবে তারপর প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। বর্তমানে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039360523223877