সেই মাতৃহীন পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দেয়ার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর - দৈনিকশিক্ষা

দৈনিকশিক্ষায় সংবাদ প্রকাশের পরসেই মাতৃহীন পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দেয়ার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষার রিপোর্ট প্রকাশের ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ডানা চিসিম নামের সেই মাতৃহীন জেএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র এবং নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শুক্রবার রাত সাড়ের এগারোটায় ‘টাকা দিতে না পারায় জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দিলো বাড্ডা হাইস্কুল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর কিছু সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদনটি মন্ত্রীর নজরে আসে এবং মাতৃহীন অসচ্ছল পরিবারের শিশুটির জেএসসি পরীক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: আবুল খায়ের শুক্রবার গভীর রাতে  বলেন, দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত সংবাদটি শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আসে এবং যে কোনোভাবেই হোক ওই পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র  দেয়া এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী মহোদয়।’ 

‘মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশটি আমি ইতিমধ্যে সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. কামরুন্নাহারকে জানিয়েছি,’ যোগ করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: আবুল খায়ের। 

আরও পড়ুন: টাকা দিতে না পারায় জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দিলো বাড্ডা হাইস্কুল

দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. কামরুন্নাহার বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ পেয়েছি। শনিবার সকালেই পরীক্ষার্থীকে বাসা থেকে নিয়ে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসবো। আর ঢাকা বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র আনার ব্যবস্থা করবো।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন ডানা চিসিমের বাবা প্রবেশপত্র না দেয়ার অভিযোগটি নিয়ে ইউএনওর কাছে যান তখনই খবরটা প্রথম জানতে পারি। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ইউএনও সাহেবও চেষ্টা করেন। গুড সয়েল কিন্ডার গার্টেনের একজন শিক্ষককে পাই রাত নয়টার দিকে। তাকে যখন চার্জ করি কেন টাকার জন্য প্রবেশপত্র আটকে রেখেছেন? তখন ওই শিক্ষক জানান, ‘টাকার জন্য নয়, ছেলেটি বেয়াদবি করেছিলো।’ কি বেয়াদবি করেছে? এবং একটি শিশুকে বেয়াদবির জন্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করবেন? এমন সব প্রশ্নের কোনো জবাবা দিতে পারেননি শিক্ষক। প্রবেশপত্র না দিলে স্কুলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও গা করেনি কর্তৃপক্ষ। পরে বিষয়টি  ঢাকার এডিসি (শিক্ষা) মহোদয়কে জানাই।   

শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাত বারোটার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা টেলিফোনে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশের কথা জানতে পারি।’ 

সাভার পৌরসভা এলাকার বাড্ডা হাইস্কুল থেকে পরীক্ষর জন্য ফরম ফিলাপ করেছে ডানা চিসিম। বাড্ডা স্কুলের কেউ প্রবেশপত্র নিয়ে কথা বলতে রাজী নয়। তারা দায় চাপাচ্ছে গুড সয়েল স্কুলের ওপর।  

জানা যায়, দশ হাজার টাকার জন্য ডানা চিসিমের জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দিয়েছে স্কুল। এতে তার পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মাতৃহীন এ পরীক্ষার্থীর। এ অভিযোগ সাভার পৌরসভা এলাকার বাড্ডা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।  শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি শিশুটিকে। তার অভিভাবকরা ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। কোনও উপায় না দেখে দৈনিক শিক্ষার কাছে টেলিফোনে অভিযোগ করেন ছাত্রটির অভিভাবক। 

তিনি জানান, শনিবার সকাল দশটায় ডানা চিসিমের জেএসসি পরীক্ষা শুরু। উপজাতি হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আরো অবহেলা করছে ছাত্রটির প্রতি। অথচ এই বাড্ডা হাইস্কুল থেকে এবার এক হাজার ছয়শ ছত্রিশ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। সারাদেশ থেকে ছাত্র কুড়িয়ে পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করায় বাড্ডা হাইস্কুল। কোটি কোটি টাকা তাদের। অথচ মাত্র দশ হাজার টাকার জন্য প্রবেশপত্র আটকে দিলো।   

অভিভাবক আরো জানান, ডানা চিসিম মূলত গুড সয়েল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামের একটি কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থী। কিন্তু কিন্ডার গার্টেনের নিবন্ধন না থাকায় সাভারেরই বাড্ডা হাইস্কুল থেকে ফরম ফিলাপ করেছে। গুড সয়েল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ একজন কোরিয়ান নারী। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও পারা যায়নি। তবে, গুড সয়েলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জন বাড়ৈ দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, ‘টাকার জন্য নয়, বেয়াদবি করার অপরাধে প্রবেশপত্র আটকে দেয়া হয়েছে। কি বেয়াদবি করেছে তা বলতে চাননি তিনি। কার সাথে বেয়াদবি করেছে? বেয়াদবির শাস্তি কি পরীক্ষা বন্ধ হতে পারে? দৈনিক শিক্ষার  এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি বাড়ৈ। 

সাভার এলাকার কয়েকজন অভিভাবক জানান,  বিশ/ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জেএসসি/এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয় বাড্ডা হাইস্কুল। গত এসএসসি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঘুষ দিয়ে এবার একটি শাখা এমপিওভুক্তও করা হয়েছে বাড্ডা স্কুলের। দুটি মাত্র ভবন এই স্কুলের। অথচ পরীক্ষার সময় এত ছাত্র কিভাবে কোথা থেকে আসে সেই প্রশ্ন তোলে না ঢাকা শিক্ষাবোর্ড।

 মতামতের জন্য বাড্ডা হাইস্কুলের কাউকে পাওয়া যায়নি।  

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কাউকে পাওয়া যায়নি মতামতের জন্য।  

তবে, শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বাড্ডা হাইস্কুলের একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, মাতৃহীন ডানা চিসিম মূলত পিসির কাছে বড় হয়। বাবা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই কোরিয়ান নারী প্রতিষ্ঠিত গুড সয়েল স্কুলে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতো।  একদিন স্কুলে তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। ফোনটি কেড়ে নিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর বাড্ডা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ডানা চিসিমের ফরম পূরণ করায়। বোর্ডকে ম্যানেজ করার জন্য কিছু বেশি টাকা নেয়া হয়। সব টাকা ওইসময় দিতে পারেনি। পরীক্ষার দুদিন আগে প্রবেশপত্র নিতে আসলে বাড্ডা হাইস্কুল ও গুড সয়েল কর্তৃপক্ষের মধ্যে কি কথা বা চুক্তি হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে, ছাত্রটির প্রবেশপত্র আটকে দেয়া হয়েছে। মাতৃহীন ছেলেটি খুব কান্নাকাটি করেছে। ওপর পিসি দুই স্কুলের প্রধানদের সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু ক্ষমা পায়নি। একটি মোবাইল ফোন পাওয়ার অপরাধে একটি শিশুর জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে?  

আজ  (২ নভেম্বর) শুরু জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জেএসসি পরীক্ষা এবং ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত জেডিসি পরীক্ষা চলবে। এ বছর মোট ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৬৮২ জন শিক্ষার্থী জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এদের মধ্যে জেএসসিতে ২২ লাখ ৬০ হাজার ৭১৬ জন ও জেডিসিতে ৪ লাখ ৯৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। সারাদেশে মোট ২৯ হাজার ২৬২ পরীক্ষা কেন্দ্রে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। 

গত ২৯ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০ দফা নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের কথাও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033960342407227