বগুড়া ওয়াইএমসিএ স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাঈশা ফাহমিদা সেমন্তীর (১৪) ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার হুমকি দিয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য করায় দুই তরুণের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেমন্তীর বাবা বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন।
বিচারক আসশামস জগলুল হোসেন শুনানি শেষে মামলা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে সিআইডি বগুড়া ক্যাম্পকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ অক্টোবর এ ব্যাপারে তারিখ ধার্য করা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা জেলবাগান লেনের বাসিন্দা নীলফামারী এনএসআই অফিসের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের ছেলে ও চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন পুলিশের এসপি মিলনের ভাতিজা আবির আহমেদ (২০) এবং জলেশ্বরীতলা নেটপ্রো স্কুল সংলগ্ন জিল্লুর রহমানের ছেলে শাহরিয়ার অন্তু (১৯)।
সেমন্তীর বাবা বগুড়া শহরের লতিফপুর পানির ট্যাংকি এলাকার হাসানুল মাশরেক রুমন এজাহার উল্লেখ করেছেন, আবির আহমেদ গত ১৮ জুন রাত ১২টা ৫৯ মিনিট ও ১টা ১৩ মিনিটে তাকে জানায়, তার মেয়ে আজ আত্মহত্যা করতে পারে। তখন তিনি তার মেয়েকে (সেমন্তী) ডেকে জানতে চাইলে সে জানায়, আবির আহমেদের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে।
আবিরের পরামর্শে সে ফোনে তার কিছু নগ্ন ছবি তোলে। এসব ছবি আবির তার ফোনে পার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে আবির ছবিগুলো শাহরিয়ার অন্তুকে দেয়। এরপর আবির ও অন্তু ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার হুমকি দেয়।
তিনি (রুমন) মেয়েকে শান্তনা ও সাহস দেন। ওই রাতেই সেমন্তী তার ঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এ ব্যাপারে সদর থানায় মামলা করতে গেলে কর্মকর্তারা ডিজি হিসেবে গ্রহণ ও সেমন্তীর মোবাইল ফোন, সিম ও মেমোরি কার্ড জব্দ করেন।
হাসানুল মাশরেক রুমন আরও জানান, পরবর্তী সময়ে তিনি মেয়ের ফোনে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও ইন্সট্রাগ্রাম আইডি খুলে দেখেন, আবির আহমেদ তার বিভিন্ন আইডি থেকে সেমন্তীর সঙ্গে কথা বলতো। সেমন্তী গত ১৭ মে তার আইডি থেকে নগ্ন ছবিগুলো আবিরের আইডিতে পাঠায়।
আবির ও অন্তু ছবিগুলো পুঁজি করে নেটে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে সেমন্তীকে বিপর্যস্ত করে। তারা দুজন গত ১৫ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সেমন্তীর সঙ্গে ৯১ বার কথা বলেছে। এ ছাড়া সেমন্তীর নগ্ন ছবিগুলো তার মা ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষী জান্নাতুল ফেসদৌসের কাছেও পাঠায়।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে তার (বাদী) মেয়ের ছবি পরস্পরের মধ্যে আদানপ্রদান করেছে। এভাবে তারা সেমন্তীর সুনাম ক্ষুণ্ণ ও তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। এজাহারে তিনি আসামিদের শাস্তির দাবি করেছেন।
হাসানুল মাশরেক রুমন দাবি করেন, আসামি আবিরের বাবা এনএসআই কর্মকর্তা ও চাচা পুলিশের এসপি হওয়ায় তিনি বগুড়া পুলিশের কাছে কোনো সহযোগিতা পাননি। তাই তিনি বিচার পেতে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করলেন।
অ্যাডভোকেট আমিনুল গণি টিটো জানান, সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শুনানি শেষে মামলাটি গ্রহণ করেন। এরপর তদন্ত করে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট দিতে সিআইডি বগুড়া ক্যাম্পকে নির্দেশ দিয়েছেন।