স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা : সিআইডির প্রতিবেদন পড়েই দেখেনি ঢামেক - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা : সিআইডির প্রতিবেদন পড়েই দেখেনি ঢামেক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে মাস চারেক আগে। ওই প্রতিবেদন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েও দেয় তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিবেদনটি ঠিকঠাক পড়ে দেখেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় পুলিশ অভিযোগপত্র দিতে পারছে না।

গত ৭ জানুয়ারি মামলার একমাত্র আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহান তাঁদের লেক সার্কাসের বাসায় মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে যায়। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অচেতন হয়ে পড়ে সে। পরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলা করেন। আসামি ফারদিন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। শুধু অভিযোগপত্র আদালতে পেশ না করায় বিচার শুরু হয়নি মৃত্যুর ছয় মাস পরও।

মামলাটি এখন তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পরই ঢাকা মেডিকেল কলেজের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন। এখনো কোনো সাড়া পাননি। এর আগে কলাবাগান থানার পরিদর্শক তদন্ত আসাদুজ্জামান মামলাটি তদন্ত করেন। গতকাল তিনি বলেন, আদালতের মাধ্যমে তিনবার তিনি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।

নিহত স্কুলছাত্রীর ময়নাতদন্ত করেছিলেন সোহেল মাহমুদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে বদলি হয়ে গেছেন। তাঁর বদলির কারণেই এই জটিলতা বলে মনে করে পুলিশ। সোহেল মাহমুদ বলেন, এখনো পর্যন্ত তাঁরা সিআইডির পাঠানো ফরেনসিক প্রতিবেদন দেখেননি। ঈদের পর সেটি দেখে তাঁরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেবেন। লকডাউনের কারণে কাজকর্মে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ফারদিনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুরাও ছিলেন। তা ছাড়া প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বলেছিল, ধর্ষণের সময় ধারালো কিছু ব্যবহার হয়েছিল। এ ধরনের কোনো আলামত প্রতিবেদনে আছে কি না, জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রতিবেদন দেখে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারবেন।

ফাইল ছবি

ছয় মাস পরও হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু না হওয়ায় নিহত স্কুলছাত্রীর বন্ধু ও স্বজনেরা আবারও কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। কাল সোমবার তাঁরা মোমবাতি হাতে পদযাত্রার আয়োজন করেছেন। আয়োজকদের একজন শ্রাবণ চৌধুরী শামস। তিনি ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা স্কুলছাত্রীর ময়নাতদন্তের পর মন্তব্য করেছিলেন, ধর্ষণের সময় বর্বরতার এমন দৃষ্টান্ত তাঁরা আর দেখেননি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি।’

নিহত স্কুলছাত্রীর মা গতকাল বলেন, মামলাটা কলাবাগান থানায় ছিল। তখনো বারবার তাঁরা বলেছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাননি। এই প্রতিবেদন হাতে না পেলে তাঁরা অভিযোগপত্র জমা দিতে পারবেন না। বিচারও শুরু হবে না। এখন মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। তারাও একই কথা বলছে। এখনো বিচার শুরু না হওয়ায় তিনি বিচার পাওয়া নিয়েই শঙ্কায় পড়েছেন।

ফারদিন ইফতেখারও একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর এক বন্ধু জানান, ফারদিন এর আগেও ঝামেলায় জড়িয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। পরে কোনোভাবে বেরিয়ে আসেন। স্কুলে থাকার সময়ই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং দীর্ঘ সময় নিরাময়কেন্দ্রে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। সরকারি কর্মকর্তার ছেলে ফারদিন বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। তিনি নিয়মিত মুঠোফোনের মডেল বদলাতেন, নিজের বাইক ছিল। গাড়িও ছিল। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই একাধিক মেয়েবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। পরিবারের লোকজনের কাছে এসব খবর নতুন নয়।

গতকাল ফারদিনদের লেকসার্কাসের বাসায় গিয়ে জানা যায়, পরিবারের লোকজন ঈদ করতে বাড়িতে গেছেন। তাঁরা ফারদিন বা এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড নিয়েও মুখ খুলতে নারাজ। ফারদিনকে জামিনে ছাড়িয়ে আনার জন্য নিম্ন ও উচ্চ আদালত দুই জায়গাতেই দৌড়ঝাঁপ করছে পরিবার।

‘ফারদিন ইফতেখার দিহানের বাসা রাজধানীর লেকসার্কাস এলাকায়। তার বাবা আবদুর রব সরকার। তিন ভাইয়ের মধ্যে দিহান সবার ছোট। দিহান ও কিশোরীর মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। দিহান ওই কিশোরীর চেয়ে দুই বছরের বড়। গত বছর ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে “ও” লেভেল শেষ করে দিহান। এখন সে জিইডির প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’

মামলার এজাহারে মেয়েটির বাবা উল্লেখ করেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় আমার স্ত্রী অফিসে এবং আমি সকাল সাড়ে নয়টায় ব্যবসার কাজে বের হয়ে যাই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে, সে কোচিংয়ের কাগজপত্র আনতে বাইরে যাচ্ছে। বেলা ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে, আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করিয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী বেলা ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন, আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি, দিহান আমার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে সে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

এ ঘটনায় ওই দিন রাতে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ২ ধারায় খুনসহ ধর্ষণ মামলা করেন মেয়েটির বাবা।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048260688781738