স্কুলের জমি দখল করে বাড়ি, প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলের জমি দখল করে বাড়ি, প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

দৈনিক শিক্ষাডটকম, দিনাজপুর |

দিনাজপুরের খানসামায় বিদ্যালয়ের জমি দখল করে বসতঘর তৈরির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শতীশ চন্দ্র রায়কে তিরস্কার ও বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর গত ২৭ আগস্ট লিখিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রহিদুল ইসলাম রাফি, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও চিত্তরঞ্জন রায় এবং স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন।

খানসামা উপজেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটির তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক শতীশ চন্দ্র রায়কে গত ৪ নভেম্বর তিরস্কারসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ইউএনও ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন। তিনি জানান, ওই বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. আনিছুর রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। 

শতীশ চন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিনে পরিদর্শন ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন ইউএনও মো. তাজ উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জমি দখল, আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতিপূর্বে এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়েও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় পার পেয়ে যান তিনি।

ইউএনওকে দেওয়া অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়দের উদ্যোগে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় চিত্তরঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট নিম্ন মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুকূলে দানপত্র দলিল মূলে ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া মৌজায় টংগুয়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর নীলফামারী জেলার দুকুড়ী এলাকার হরেক চাঁদ ব্রজবাসী পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক পদে শতীশ চন্দ্র রায় তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়ের নিয়োগপত্র অনুযায়ী ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর থেকে সমস্যা দেখা দেয়।

শতীশ চন্দ্র রায় বিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ না করে প্রধান শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়ের নামে সংশোধনী রেজিস্ট্রি না করিয়ে অন্য ওয়ারিশের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূত ভাবে নিজের নামে ৪৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। এই অংশে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ছিল। প্রধান শিক্ষক শতীশ চন্দ্র কৌশলে জমি লিখে নেওয়ার পরে এখন আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দখলে নিয়ে নিজে বসবাস করছেন এবং দোকান ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের জমি ও পুকুর নিয়ম ছাড়াই গোপনে অর্থের বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম রাফি বলেন, প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল যার, তিনিই তা দখল করেছেন। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে আন্দোলন করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া শতীশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘নিয়ম মেনেই আমি জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি।’ প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের জমি দখল করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ইউএনও স্যার তদন্ত করেছেন। তিনি যা করবেন তা নিয়ে আমার বলার কিছু নাই।’ বিদ্যালয়ের জমি অন্যজনকে দেওয়ার বিষয়ে সতীশ চন্দ্র বলেন, ‘এগুলা তো অনেক আগের ঘটনা। এত জানাশোনা ছিল না, তাই হয়ে গেছে। তবে রেজুলেশন করে লিজ দেওয়া হয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, ‘শতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নিয়ম মেনে ধারাবাহিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আনিছুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নে মনোযোগী হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

শনিবার স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে কি না, যা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শনিবার স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে কি না, যা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা সঙ্কটে খাবি খাচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড - dainik shiksha কর্মকর্তা সঙ্কটে খাবি খাচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড হাইস্কুলে ভর্তির লটারি ১৭ ডিসেম্বর - dainik shiksha হাইস্কুলে ভর্তির লটারি ১৭ ডিসেম্বর বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ ১৮৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী - dainik shiksha বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ ১৮৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে সন্ধ্যার পর গান-মাইক বাজানো নিষিদ্ধ - dainik shiksha ঢাবিতে সন্ধ্যার পর গান-মাইক বাজানো নিষিদ্ধ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034899711608887