রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সেনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসে গরুর হাট। এলাকাবাসী জানান, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সেনগ্রাম কালীতলার হাট বসে প্রতি সোমবার। তিন-চার মাস ধরে স্কুলসংলগ্ন বটগাছের নিচে মঞ্চ বানিয়ে মাইক বাজানো হচ্ছে। মাঝেমধ্যে নাচেরও আয়োজন করা হয়। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের পড়াশোনা। স্কুল চলাকালীন গানবাজনা হওয়ায় শিশুরা ক্লাস বাদ দিয়ে গানবাজনা শোনে। তাছাড়া এত জোড়ে মাইক বাজানো হয় যে, পাঠদানেরও কোনো সুযোগ থাকে না।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্কুলটিতে সকাল ৯টায় ক্লাস শুরু হয়ে দুই শিফটে চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সেনগ্রাম কালীতলা বাজারসংলগ্ন রাস্তার পাশেই স্কুলটি। স্কুলটির সঙ্গে শতবর্ষী প্রকাণ্ড একটি বটগাছ। বটগাছের মাথায় বসানো হয়েছে পাঁচটি মাইক। মাইকের শব্দে দু'জন সামনাসামনি দাঁড়িয়েও কথোপকথনের মতো অবস্থা নেই। স্কুল ভবনের দেয়াল ঘেঁষে একটি অস্থায়ী মঞ্চ। সেখানে চারজন যন্ত্রশিল্পী ঢোল, বাঁশি, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বাজাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অনেক আগ্রহ নিয়ে গানবাজনার আয়োজন দেখছিল। তখনো হাট জমে ওঠেনি। স্কুলের অপর ভবনটির বারান্দায় চেয়ার-টেবিল বসানো হয়েছে খাজনা আদায়ের জন্য। দর্শকদের বসার জন্য পাতা হয়েছে শতাধিক প্লাস্টিক চেয়ার।
হাটে গরু নিয়ে আসা পাংশা উপজেলার চরঝিকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, দুই থেকে আড়াইশ' গরু আসে প্রতি হাটে। বেচাকেনা ভালো হয়।
বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মর্জিনা খাতুনের কাছে পরিচয় দিয়ে কথা বলব জানালে তিনি মাইকের সাউন্ড কমানোর জন্য লোক পাঠান। বিদ্যালয়ের ওপর হাট বসানো এবং বিকট শব্দে মাইক বাজানো প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাট তো ৫০ বছর ধরেই বসছে। তবে মাইক বাজছে কয়েক মাস ধরে। স্কুলের চারপাশ দিয়েই হাটবাজার। তাদের জমির ওপর তারা মাইক বাজায়, আমরা কী করব। তিনি দাবি করেন, মাইক বাজানো হয় দুপুর থেকে। নিষেধ করলে বন্ধ করে।
হাটের ইজারাদার তিনি পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুস মুন্সী বলেন, হাট জমানোর জন্য এবং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটু গানবাজনা এবং মাঝেমধ্যে নাচের আয়োজন করে থাকি। এতে স্কুলের কোনো সমস্যা হয় না। বিষয়টি স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারাও জানেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুন্সী মহসিন বলেন, আমি যদি বলি এটা হবে না, তাহলে বন্ধ করবে না কেউ। শিক্ষা কর্মকর্তাও বিষয়টি জানেন। হাটের ইজারা দেন ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান। তারাও জানেন।
পাংশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বশিরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমাদের প্রধান শিক্ষক বা ম্যানেজিং কমিটির কেউ জানাননি। কোনো অভিযোগও কেউ করেননি। জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। স্কুল চলাকালীন স্কুল চত্বরে মাইক বাজানোর কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাংশার ইউএনও মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি। এভাবে স্কুলসংলগ্ন এলাকায় মাইক বাজানোর নিয়ম নেই। হাট থাকবে হাটের সীমানায়। কোনোভাবেই স্কুলের ভেতরে যেতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে স্কুল ও বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধান করা হবে।