স্কুলে মাকে অপমান করায় ক্ষোভে অজ্ঞান ছাত্রের মৃত্যু - দৈনিকশিক্ষা

ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়স্কুলে মাকে অপমান করায় ক্ষোভে অজ্ঞান ছাত্রের মৃত্যু

নওগাঁ প্রতিনিধি |

নওগাঁর পত্নীতলায় এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নিচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।

রাব্বী হাসান (১৬) এবার গগনপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অংশ নিতে না পারায় অকৃতকার্য হয় সে।

ফলে ফরম পূরণ করার সুযোগ দিতে গত ১১ নভেম্বর পরীক্ষার্থী অনুরোধ নিয়ে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তার মা।

প্রধান শিক্ষক রাব্বী ও তার মাকে বলেছিলেন, ফরম পূরণের সরকার নির্ধারিত ফির সঙ্গে আরও ১ হাজার ৯০০ টাকা দিতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য স্কুলের কোচিংয়ের ফি এটি।

এ সময় রাব্বীর মা ছেলেকে স্কুলের কোচিং করাবেন না জানালে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন রাব্বি ও তার মাকে অপমানজনক কথা বলেন এবং মা-ছেলেকে তাড়িয়ে দেন। মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাব্বী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।

তৎক্ষণাৎ তাকে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাটি ঘটে গত ১১ নভেম্বর রোববার। প্রধান শিক্ষকের অপমানে সহপাঠীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে।

অন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা এই ঘটনার বিচার চেয়ে ১২ নভেম্বর (সোমবার) ও গত ১৩ নভেম্বর (মঙ্গলবার) এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। স্বজন ও সহপাঠীরা অভিযোগ করে বলেন, পরীক্ষা দিতে না পারার দুশ্চিন্তা ও অপমানে আর ক্ষোভে রাব্বী অসুস্থ হয়ে যায়।

একপর্যায়ে স্ট্রোক হয় তার। এ ঘটনায় দায়ী প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এ বিষয়ে গগনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

গগনপুর উচ্চ বিদ্যালয় এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ঘোষনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘কোচিংয়ের টাকার কারণে তার পরীক্ষার ফরম পূরণ করা হয়নি সেটি আমার জানা নেই।

বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। বিদ্যালয়ে ফরম পূরণের সময় কোচিংয়ের টাকা আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেজাল্ট ভাল করার জন্য স্কুলে কোচিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ কোচিং করতে চাইলে পারবে। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়।

এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোচাহাক আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় ফরম পূরণে ফি নির্ধারণ করে দেয়।

মানবিক ও ব্যবসা শাখায় ১,৭৫০ টাকা, বিজ্ঞান শাখায় ১,৯৮০ টাকা ও মাদরাসা ১,৭০০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয় ও মাদরাসায় সরকারি নিদের্শনাকে উপেক্ষা করে কোচিং ফি এবং উন্নয়ন ফি’সহ নানা অজুহাতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।

তবে বাড়তি টাকার জন্য কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে না কোন ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবকদের। বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, গগণপুর উচ্চ বিদ্যালয় ৪ হাজার টাকা, নজিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ২ হাজার ৭৫০ টাকা, কুন্দন উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৫০ টাকা, শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৬০০ টাকা, আমাইগ উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ১০০ টাকা, পুইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা, পত্নীতলা উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা, মধইল উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার টাকা, শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, উষ্টি উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ১০০ টাকা, মান্দইন উচ্চ বিদ্যালয় ২ হাজার ৯৫০ টাকা, বাঁকরইল উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৭০০ টাকা, আমন্ত উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা, শিড়াহা উচ্চ বিদ্যালয় ৪ হাজার টাকা, নজিপুর সিদ্দিকিয়া মাদরাসা ২ হাজার ৫০০ টাকা, উষ্টি জাকের ফাজিল মাদরাসা ৩ হাজার ২০০ টাকা, গগনপুর ওয়াজেদিয়া ফাজিল মাদরাসা ৩ হাজার টাকা, পাটিআমলা মাদরাসা ২ হাজার ৮০০ টাকা। কুন্দন উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বাবা শাহাজান আলী বলেন, আমার মেয়ের ফরম পূরণের ফি ১ হাজার ৭৫০ টাকার স্থলে ৩ হাজার ৫০ টাকা নিয়েছেন।

শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ হোসেন বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত ফি দিয়েই ফরম পূরণ করছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোচাহাক আলী সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোরশেদুল আলম বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন সরকার বলেন, এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় হচ্ছে বলে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গগনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রাব্বী হাসান এর মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037391185760498