রাজধানীর রমনার সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কক্ষ ও মাঠের জায়গা দখল করে মাদক ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগের তিন নেতার বিরুদ্ধে। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে মাদক ব্যবসা করছেন এবং চাঁদার জন্য লোকজনকে ধরে এনে ওই স্কুলে আটকে নির্যাতন করেন বলেও জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত তিনজন হলেন- গোলাম মোস্তফা শিমুল, দেওয়ান আলীম উদ্দিন শিশির ও মাসুদ রানা। তারা নিজেদের যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম করছেন। বুধবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ করে। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শেখ ফরিদুজ্জামান বলেন, শিমুল, শিশির ও মাসুদ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা ও মাদকের ব্যবসা করে আসছে। স্কুলের বিভিন্ন কক্ষ দখল করে রাতে মাদক ব্যবসা চালায় তারা। বিদ্যালয়ের মাঠে অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে চাঁদা ওঠায়। মাঠে টর্চারসেল বানিয়ে চাঁদার জন্য লোকজন ধরে এনে নির্যাতন চালায়।
অধ্যক্ষ বলেন, এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় গত রোববার দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে তিন শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও রুহুল আলমকে মারধর করা হয়। ওই সময় তারা পিস্তল উঁচু করে বলতে থাকে, তারা যা করবে, তা মুখ বুঝে সহ্য করতে, না হলে জীবনের মতো শেষ করে দেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও তা তুলে নিতে শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজল বলেন, তিনি দখলদারদের বিরুদ্ধে গিয়ে হত্যার হুমকি পেয়েছেন। এ নিয়ে সোমবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিমুল, শিশির ও মাসুদ যুবলীগের পরিচয় দিয়ে এসব করছে। মূলত তারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং মাদক ব্যবসায়ী। শিমুলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
কাউন্সিলর বলেন, তারা মৌচাকের আনারকলি মার্কেট, বিদ্যালয়ের মাঠ ও স্থানীয় মসজিদের আশপাশে কয়েকশ ছোট-বড় দোকান বসিয়ে এসব থেকে প্রতিদিন ৬০ হাজার টাকার চাঁদা তুলছে। এ ছাড়া স্কুল মাঠে গাড়ি পার্ক করে সেখান থেকে টাকা তোলা হয়। শিমুল বিদ্যালয়ের একজন দাতা সদস্য স্বীকার করে পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, তাও জোর করে এ পদ নিয়েছে সে।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, শিমুল, শিশির, মাসুদ ও তাদের লোকজন বিদ্যালয়ের পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে। এসব ক্যামেরা দিয়ে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করে মাদক ব্যবসা চালায়। মাদক ব্যবসার জন্য রাতে বিদ্যালয়ের মূল গেট খুলে রাখতে বাধ্য করে। তা না করলে নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিনজনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে দু'জনের ফোন বন্ধ পেলেও দেওয়ান আলীম উদ্দিন শিশির ফোনে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মারধরের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। কাউন্সিলরকে হত্যার হুমকির বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, স্কুলের শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পরের দিন একটি জিডিও হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শিক্ষকদের নিরাপত্তায় বিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।