স্যরির ক্ষমতা কতটুকু? - দৈনিকশিক্ষা

স্যরির ক্ষমতা কতটুকু?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমি যেভাবে থাকি বা যে রকম থাকি তাতে স্যরি-থ্যাংকস বলা তো দূরের কথা, খুব একটা কথা বলারই সুযোগ হয় না। তবে একটি বিষয় খেয়াল করেছি, থ্যাংকস বলার থেকে মানুষের সামনে স্যরি বলায় আলাদা রকম আনন্দ পাওয়া যায়। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, আমাকে প্রতিদিন পাবলিক বাসে করে ভ্রমণ করতে হয়। ঢাকার পাবলিক বাস সম্পর্কে প্রায় সবারই ধারণা না থাকার কথা নয়। মাঝপথ থেকে উঠলে একটি আসন মেলা যতটা না ভাগ্যের বিষয়, এর থেকেও সংগ্রামের হলো খানিকটা জায়গা দখল করে পাশ ফিরে হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা। আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েন্সল্যাব আসা-যাওয়া হতো সপ্তাহে ছয় দিন। আমার ব্যাগের সাইজও বড়ো ছিল। বলা যায়, ব্যাগে যা যা বহন করতাম সে সবের চেয়েও ব্যাগের ওজন বেশি ছিল। নিয়মমাফিক এক সকালে বাসে উঠি। আসন পাইনি। পরবর্তী বাসের জন্য অপেক্ষাও করিনি। যেদিক ফিরে দাঁড়িয়েছি তার ঠিক উলটো পাশে ছিলেন এক অফিসার-টাইপ ভদ্রলোক। বয়সে আমার বাবার থেকেও বেশি। ব্যাগ আমার পেছনের দিকে ঝুলিয়ে রাখার কারণে তার গায়ে হয়তো একটু লেগেছিল। আমারও কিছু করার ছিল না। কারণ দাঁড়াতেই সমস্যা হচ্ছিল। তিনি আমার ব্যাগ ধরে এমন করে টান মারলেন, আরো দুজন আমার সঙ্গে আঘাত পেল। পেছন ফিরে তাকালাম। দেখি বাঘের মতো তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। যেন ভদ্রলোকটির দুচোখ আমাকে খেতে চাচ্ছে। কিছুটা আশ্চর্য হলাম, মেজাজও খারাপ হয়ে গেল। তবে আমার মেজাজ খারাপ হলেও তার প্রকাশ ঘটে না সবসময়। এ প্রকৃতির দান।

সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম,‘কিছু বলবেন স্যার’? আমি সাধারণত স্যার-ম্যাডাম ছাড়া কথা বলি না একটু বয়েসি মানুষের সঙ্গে। হোক সে মুদি দোকানের কর্মচারী কিংবা বড়ো অফিসার। তিনি আমাকে এক রকম শাসিয়ে উলটো জিজ্ঞেস করলেন,‘বুঝতে পারছ না কিছু’?

- না বললে বুঝব কী করে স্যার?

- আরে তুমি স্যার স্যার রাখ। দেখে তো মনে হচ্ছে স্টুডেন্ট। আগে ভদ্রতা শেখ।

- ভদ্রতা... বুঝলাম না...

বাস তখন জ্যামের কারণে দাঁড়িয়েছিল। তারও ঝগড়া করতে সুবিধা হচ্ছিল। আমাকে পরামর্শ দিলেন লাল গলায়, কোনো সময় যেন আমি ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে বাসে না উঠি। তাকে শুধু বললাম, ‘স্যার, বাস এখন দাঁড়িয়ে আছে, আমি কি নেমে যাব? ৯টায় আমার ক্লাস আছে’। এবার তিনি আরো রেগে গেলেন। বললেন, এত ভক্তি দেখাইস না। পাশাপাশি খুব প্রচলিত একটা প্রবাদ ঝাড়লেন, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

এ রকম আরো কয়েকবার ঘটেছে। আমি আমার ব্যাগ রেখে দিলাম। বেশ কিছুদিন আমি ব্যাগ ছাড়াই ক্লাস করছিলাম। শুধু নোটবুক নিয়ে ক্লাসে যাই। ব্যাগ থাকলেও ঐ নোটবুক ছাড়াও ইয়ারফোন, পেনড্রাইভ, চার্জার সঙ্গে রাখা যেত। কিন্তু শুধু নোটবুক যখন আমার হাতে চলে আসল তখন নিজেকে একটু হালকা মনে হলো।

নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে চাইলাম। কিন্তু সেটা কীভাবে? একদিন ক্লাস শেষে কি একটা কাজের জন্য খুব তাড়াহুড়ো করে বাস স্টপেজের দিকে এগুচ্ছিলাম। বেখেয়ালেই একজনের সঙ্গে আমার ধাক্কা লেগে গেল। অনুমান করছিলাম যার সঙ্গে আমার ধাক্কা লেগেছিল সে যুবক আমার থেকে সিনিয়র হবেন। বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ‘স্যরি’। তিনি আমার দিকে একনজর তাকালেন এবং হেসে দিলেন। বললেন, ‘ব্যাপার না, আমিও খেয়াল করিনি’।

পথেঘাটে আমি ‘দুঃখিত’ শব্দের প্রয়োগ করি সেটি নতুন নয়। কিন্তু ঐদিন আমার একটি শিক্ষা হয়েছিল। ভাবলাম, এখন থেকে যদি এই বিশেষ জাদুকরি শব্দ ‘দুঃখিত’ গণপরিবহনে অপ্রত্যাশিত ঐসব ঘটনার সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। ঐদিন ইচ্ছে করেই আমার সমান এক ছেলের পায়ের ওপর পা রেখে কিছু না বোঝার আগেই বললাম, ‘স্যরি’।

ছেলেটি বন্ধুসুলভ হাসি দিয়ে বললো, ‘ইটস ওকে’।

সেদিনের সেই হাসি আমার কৃত্রিমতার জন্য হলেও, এখন প্রাকৃতিক। প্রায় প্রতিদিন আমি সেই হাসি উপহার পাই, উপহার দেই। বাসে আর ঝগড়া হয় না। পুরোনো ঘটনাগুলোর জন্য অনুশোচনা হয়। যতটা সম্ভব আগের থেকে সহযাত্রীর যাতে কোনো রকম সমস্যা না হয় আমার কারণে সেদিকে খেয়াল রাখি। ইংরেজি অভিধানের একটি শব্দ:‘স্যরি’; যার বাংলা অর্থ দুঃখিত। শব্দটি আপনার সম্পর্কে লোকের কাছে ইতিবাচক ধারণা তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লেখক : মু. মিজানুর রহমান মিজান, শিক্ষার্থী, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031390190124512