হাইকোর্টে রিট-জট: সরকারি দপ্তরগুলোর বিরুদ্ধে রুলকে গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

হাইকোর্টে রিট-জট: সরকারি দপ্তরগুলোর বিরুদ্ধে রুলকে গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রিটের শুনানি শেষে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের জবাব দেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হয় নীরবেই। মেলে না হাইকোর্টের রুলের জবাব। সরকারি দফতরগুলো অনেকটা অবজ্ঞাভরেই ফেলে রাখে জবাব দেয়ার বিষয়টি। আর এভাবেই সরকারপক্ষীয় গাফিলতির কারণে ঝুলে থাকে হাজার হাজার রিটের নিষ্পত্তি। উচ্চ আদালতে মামলা জটের কারণ অনুসন্ধানে এ তথ্য দেন রিটকারী আইনজীবীরা। 

সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার দফতর সূত্র জানায়, সারা দেশের আদালতগুলোতে ৩৮ লাখের মতো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ‘রিট’ মামলা। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে এসব রিট। নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও হ্রাস পাচ্ছে না রিট-জট।

আইনজ্ঞদের মতে, নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রশ্নে হাইকোর্টে রিট করা হয়ে থাকে। দেশের যেকোনো সংক্ষুব্ধ নাগরিক সংবিধানের ১০২ এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে রিট পিটিশন করতে পারেন। রিটে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিবাদী করা হয়। কী কারণে রিটকারীর প্রত্যাশিত অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি- তা জানতে চাওয়ার জন্য আদালত বিবাদীদের বক্তব্য জানার জন্য রুল জারি করেন। নাগরিককে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য আদালত ৫ ধরনের আদেশ দেন রিটের পরিপ্রেক্ষিতে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে দেয়া এই আদেশ ‘রিট আদেশ’ হিসেবে পরিচিত। রিট আদেশ বাস্তবায়নে হাইকোর্ট সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নির্দেশ দেন। কতদিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে কিংবা আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে সেটিরও একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। রুল জারি হয় রিট পিটিশন দায়েরের পর প্রাথমিক শুনানি শেষে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে রিটের জবাব দিতে বলা হয়। কমপক্ষে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয় রুলের জবাব দানের জন্য। এটিই রিট মামলার পদ্ধতি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জারিকৃত রুলের জবাব আসছে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ওপর নোটিশ জারি নিশ্চিত করার পর আবেদনকারী পক্ষ আদালতের দৃষ্টিতে এনে চূড়ান্ত শুনানির জন্য আবেদন করছেন। ফলে প্রাথমিক রুলের জবাব ছাড়াই চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুলটি অ্যাবসোলিউট (চূড়ান্ত) করা হয়। সে অনুযায়ী হাইকোর্ট রায় দেন। এ ধরনের রিটের ক্ষেত্রে প্রাথমিক রুলের জবাব আসাটা কতটা জরুরি- এ প্রশ্নে বিতর্ক রয়েছে।

কিন্তু মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় এ পদ্ধতিগুলো মানতে কোনো বাধ্যবাধকতার প্রথা গড়ে ওঠেনি। এ প্রথা গড়ে উঠলে যাদের ওপর রুল জারি হয় তারা দ্রুত জবাব দিতে বাধ্য থাকতেন বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্ট বারের তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিম আল ইসলাম বিচার বহিভর্ত হত্যা এবং ফতোয়া সংক্রান্ত রিটে রুলের জবাব না আসার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, সরকারের ওপর জারি হওয়া আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হওয়ার যে চর্চার পথ, তা অনেকটাই দুর্গম হয়ে পড়ছে। রুলের জবাব না আসার কারণে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘসূত্রতার বলয় থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। মামলারও নিষ্পত্তি হচ্ছে না সময়মতো। ফলে বিচারবহির্ভূত শাস্তি কিংবা ফতোয়ার অপব্যবহার বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রুলের জবাব সময়মতো না আসা কিংবা কিছু ক্ষেত্রে জবাব একেবারেই না আসার পেছনে যে কারণ তা হলো, সংশ্লিষ্ট দফতরের উদাসীনতা, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, সরকারি আইনজীবীদের কর্তব্যে অবহেলা এবং আদালতের বাধ্যবাধকতার কোনো কাঠামো বা চর্চা না থাকা।
রাজউকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি রিটের ফিরিস্তি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বাবরুল আমীন বলেন, রিটটি (নং-২২০২/২০০১) ২০০১ সালের ৪ জুন দায়ের হয়েছে। ১৯ বছরেও রিটটির নিষ্পত্তি হয়নি। দশ বছর কেটে গেছে রুলের জবাব আসতেই। রিটটির সর্বশেষ শুনানি হয়েছে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর। সরকারপক্ষের সৃষ্ট জটিলতার কারণে দুই দশকেও রিটটির নিষ্পত্তি হয়নি। রুলের জবাব প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলে হয়তো রিট নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা থেকে কিঞ্চিৎ রেহাই পাওয়া যেত বলে মনে করেন তিনি।

চাকরি সংক্রান্ত মামলায় অভিজ্ঞ অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন দোলনের মতে, রুলের জবাব না আসার কারণে বিচার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত রুলের জবাব দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সংস্থাগুলোর বাধ্যবাধকতা থাকে না। এখানে সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়েরও এ বিষয়ে তৎপর থাকা উচিত।

জানা যায়, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো যোগাযোগ রাখে না অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে। দ্বিতীয়ত, তারা সতর্ক থাকে না এবং উচ্চ আদালতের যে অনেক ক্ষমতা রয়েছে, তা উপলব্ধি করে না। তৃতীয়ত, দফতরগুলো মামলার নোটিশকে গুরুত্ব দেয় না। তবে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং সজাগ থেকে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে বলে দাবি করেন একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034029483795166