বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, হাওড় বাওড়ের দেশ, খাল-বিল ঘেরা অপার সম্ভাবনার দেশ। তা সত্ত্বেও হাওর জনপদের শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসা তথা পশ্চাৎপদতাসহ নানাবিধ বৈষম্যের কথা কারও অজানা নয়। আমাদের দেশের হাওর অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থান নিম্ন এবং অসমতল। এ এলাকা জুড়ে শিরা-উপশিরার ন্যায় পেঁচিয়ে আছে অনেক নদ-নদী ও খাল-বিল। বর্ষাকালে সাগরের ন্যায় বিশাল জলরাশি দূর থেকে গ্রামগুলি ভাসমান দ্বীপের ন্যায় পানির উপর টলমল করে। এ সময় নৌকা এলাকার একমাত্র যানবাহন। বর্ষাকালে বড় বড় হাওরে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যোগাযোগের জন্য পাড়ি জমালে এবং নৌকা ভাসালে মনে হয় অকূল দরিয়ার কূল নাই কিনার নাই।
গ্রীষ্মের বন্ধুর মেঠো পথ, ধুলোময় প্রান্তর, খাল-বিলসহ এসব নানাবিধ প্রতিকূলতা পেরিয়ে কর্মস্থলে আসা যাওয়া আবার বর্ষায় সাগর সদৃশ হাওরের ঢেউ পেরিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত সব কিছুইতে প্রতিকূলতা আর প্রতিকূলতা। এসব নিয়েই নিজেকে শিক্ষায় বিলিয়ে দেয়া যা শিক্ষকদের নিত্য দিনের গল্প।
অপরদিকে স্বাধীনতা ও ভাষার জন্য আত্মত্যাগের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে এদেশের মানুষের। যা প্রমাণ করে বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ দেশের মানুষের প্রথম ও শেষ বাসনা। সেই অনুধাবন থেকেই সরকার এ অঞ্চলকে বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা করেছে এবং হাওর এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকতা কর্মচারীদের হাওর ভাতা চালু করেছে। যা অত্যন্ত মানবিক ও যথার্থ সিদ্ধান্ত। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা একই এলাকায় একই পরিবেশে শিক্ষার প্রসারে অনন্য ভূমিকা রাখছে যা সরকারের উচ্চ মহলও অবগত। তাছাড়া জাতীয় আন্তর্জাতিক দিবস এমনকি সরকারের সব নির্দেশনা প্রতিপালনে শিক্ষকরা কোনো অংশেই কম নয়।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের হাওর-ভাতা প্রদানে আজও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যা শিক্ষার প্রতি চরম বৈষম্য কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। তাই এ ব্যাপারে আশু ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত বেসরকারি শিক্ষক সমাজ আশা করে। অন্যথায় বৈষম্যের শিকার শিক্ষকরা ব্যথিত হলে শিক্ষায় প্রভাব পড়বে। তাই বিলম্ব না করে হাওর-ভাতা প্রদান করে শিক্ষা ও শিক্ষককে আস্থায় নেয়া জরুরি। কেননা জাতি গঠনে তারাই অগ্রপথিক।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]
শাহআলম সরকার : সহকারী শিক্ষক, অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ।