সিলেটে বইপড়া উৎসবের উদ্বোধনী দিনে অতিথিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ হাতে প্রতিযোগীরা।সহস্রাধিক শিশু, কিশোর, তরুণের সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ লাল-সবুজে সাজানো মঞ্চের দিকে। সেখানে শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ। অনেকটা গল্পের মতো করে তিনি তাঁর মামার কাছে শোনা বাবার শেষ স্মৃতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন, ‘বাবা ভাত খুব পছন্দ করতেন। ৩১ নভেম্বর রাতে বাবা শেষবার ভাত খান। পাক সেনাদের অত্যাচারে তখন তাঁর পুরো শরীরে ফোসকা পড়েছে। উপড়ে নেওয়ায় নখহীন হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। সাদা ভাতের সঙ্গে প্লেটে রাখা ডাল, পেঁপে ভাজি আর দুটি কাঁচা মরিচ। তিনি ভাতের থালায় হাত দিয়েছেন। সারা ভাত তাঁর হাতের রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে। সেই লাল আর সবুজ যেন আমার পতাকার রং। এটিই আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের রূপক চিত্র।’
তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রত্যয়ে গতকাল শনিবার সিলেটে তিন মাসব্যাপী বইপড়া উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার তাগাদা দিয়ে তিনি তুলে ধরেন পাকিস্তানিদের বর্বরতার চিত্র।
সিলেট জেলা পরিষদের সহযোগিতায় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ইনোভেটর। মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থপাঠে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি। এবারের বইপড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার এক হাজার ছয়জন শিক্ষার্থী। তাদের হাতে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি। এই বইকে ঘিরেই এবারের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাওন মাহমুদ যখন মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল দিনের স্মৃতিচারণা করছিলেন তখন উপস্থিত সহস্রাধিক প্রতিযোগী তন্ময় হয়ে শুনছিল। তাদের চোখে মুখে ছিল বিষাদের ছায়া, কারো চোখে জল টলমল করছিল। শাওন মাহমুদ তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাবার সেই চেতনার আমি বাহক, আপনারা যারা তরুণ প্রজন্ম তারা এরপর এটি বহন করবেন।’
ইনোভেটরের মুখ্য সঞ্চালক রেজওয়ান আহমদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. তাহমিদুল হক, জেলা পরিষদ সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ, জেলা পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা নীলকান্ত সিংহ।
গীতবিতান বাংলাদেশের পরিচালক বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরীর পরিচালনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভেটরের নির্বাহী সঞ্চালক ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের সাহসের জন্য, দ্রোহ, বিপ্লব আর সংগ্রামের প্রেরণার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব আর শৌর্যকে অন্তরে প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিবকে অধ্যয়ন জরুরি।’ বক্তারা আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুজিব পাঠ কখনো সমাপ্ত হয় না। দেশপ্রেম কখনো ফুরিয়ে যাওয়ার জিনিস না। তাই, তারুণ্যের মনোজগতে দেশপ্রেমের প্রদীপ প্রজ্বলিত করতে গ্রন্থ পাঠের বিকল্প নেই।’