কুমিল্লার ঘটনার জেরে দেশের অন্যান্য স্থানে মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক মানববন্ধন থেকে শিক্ষকেরা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন।
সমাবেশে শিক্ষকেরা বলেন, কিছুসংখ্যক ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করতেই সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। অবিলম্বে সব ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকেই।
দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু চত্বরে শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এ মানববন্ধন হয়। শিক্ষকেরা মানববন্ধন করেন ‘সম্প্রীতির জন্য মানববন্ধন’ ব্যানারে।
মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার, সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. এমদাদুল হক, কলা অনুষদের সাবেক ডিন মো. সেকান্দর চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল হোসাইন, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক এস এম কাজী খসরুল আলম কুদ্দুসীসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক।
হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়ে তাঁরা বলেন, সাম্প্রদায়িক এসব অপশক্তির কঠোরভাবে দমন করতে হবে। আবহমানকাল ধরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এ ভূখণ্ডে বসবাস করেছে। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান হয়েছে। এখন সবাই এ দেশের নাগরিক। কিন্তু একটা গোষ্ঠী নানা সময়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে।
মানববন্ধন থেকে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, গত কয়েক দিনে যেসব স্থানে ন্যক্কারজনক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, সেসব স্থানে কি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন না? তাঁদের ভূমিকা কী? এসব খতিয়ে দেখতে হবে।
শিক্ষকেরা বলেন, ‘সরকার দশভুজার মতো। বিভিন্ন সংস্থা সরকারের নির্দেশনা পালন করে। সংস্থাগুলোর সহায়তায় এসব তাণ্ডবের তদন্ত করতে হবে। পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে বড় ধরনের গন্ডগোল রয়েছে। এখানে গবেষণা বলতে যা বোঝায়, তা নেই। রেফারেন্সের মাধ্যমেই আমরা আচার-আচরণ চালিয়ে যাই। অন্যদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করি। এসব কর্মকাণ্ড সংবিধানবিরোধী।’
উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ একসঙ্গে থাকবে। এর মধ্যে কোনো এক অংশের ওপর আঘাত আসলে, আমরা মেনে নেব না।’
মানববন্ধন শেষে কলা অনুষদের সাবেক ডিন মো. সেকান্দর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মনোজগতে জোরেশোরে আঘাত করতে হবে। এটা করতে হবে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির সাহায্যে। লালন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনদের যে আদর্শ, সেটাই দেশে বাস্তবায়ন করা দরকার। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান দিয়েছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জিয়াউর রহমান সেটাকে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই সংবিধানেই ফিরে যেতে চাই।’