সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের বিদেশী হিন্দু স্ত্রীকে বাড়ি উইল করার ঘটনায় স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্টারকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৮ মার্চ তাদের বিয়ে সংক্রান্ত নথিসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশী হিন্দুকে বিয়ে সংক্রান্ত নথিপত্র দেখতে স্পেশাল ম্যারেজ রেজিস্টারকে তলব করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের বিদেশী হিন্দু স্ত্রীকে বাড়ি উইল করা নিয়ে আইনগত বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য চার আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন হাইকোর্ট। তারা হলেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, কামাল-উল-আলম, মো. নুরুল আমিন।
পরে আদালতে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২ অনুসারে কোন মুসলিম কোন হিন্দু নারীকে বিয়ে করতে পারে কিনা এবং সে স্ত্রী হিসাবে তাকে দেয়া জগলুল ওয়াহিদের সম্পূর্ণ বাড়ি উইল করার আইনগত ভিত্তি বিষয়ে মতামত প্রদান করেন অ্যামিকাস কিউরিরা।
আদালতে জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাসুদ আর সোবহান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে হাইকোর্ট গত ২৬ অক্টোবর সন্ধায় হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন।
আদেশে অনতিবিলম্বে তাদের বাবা মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২ এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় প্রবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাতেই ওই বাড়িতে তাদের প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর রাতেই গুলশান থানার ওসিকে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসারকে টেলিফোনে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ আদেশের পর ওইদিন রাতেই দুই বোন মুশফিকা মোস্তফা ও মোবাশশারা মোস্তফাকে বাসায় উঠিয়ে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুলশান থানা পুলিশ। পাশাপাশি তাদের বাড়ির সামনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি। গৃহকর্তার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে তার দুই মেয়ে অবস্থান নিয়েছেন বাড়ির সামনে। ওই দুই বোনের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। ১০ অক্টোবর মোস্তফা জগলুলের মৃত্যু হয়। মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ পেশায় পাইলট ছিলেন। ভাইবোনদের মধ্যে শুধু সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশে নেই। দুই দিন ধরে বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে মুশফিকা ও মোবাশ্বেরা তারা বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। মুশফিকা
গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ১৯৮৪ সালে তার বাবা মাকে নিয়ে গুলশানের এই বাসাতেই সংসার শুরু করেছিলেন। তাদের জন্ম এই বাড়িতে। ২০০৫ সালে তাদের মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে আঞ্জু কাপুর নামের এক ভারতীয়কে তাদের বাবা বিয়ে করেন। তিনি একাই এখন এই বাড়ির ভোগদখল করছেন বলে জানা গেছে।