হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিন ছাত্র কম্পিউটার হ্যাকিং বন্ধে নতুন ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘রেফারেন্স পাসওয়ার্ড লক ওপেনার ডিভাইস’। ডিভাইসটি ইনস্টল বা সংযুক্ত থাকাবস্থায় যদি কেউ কম্পিউটারে সংরক্ষিত গোপনীয় তথ্য বা ফাইলে ঢোকার (এক্সেস) চেষ্টা করে, তাহলে প্রকৃত ব্যবহারকারীর মুঠোফোনে কল বা বার্তা (মেসেজ) চলে যাবে। ডিভাইসটির সাহায্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে কম্পিউটার চালু ও বন্ধ করা যাবে।
এই আবিষ্কার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার দর্শনার্থীদের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। মেলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছে এই উদ্ভাবন।
হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র মো. রাব্বি হোসাইনের নেতৃত্বে মো. আব্দুল আলীম ও মো. আখতারুজ্জামান নুর ‘রেফারেন্স পাসওয়ার্ড লক ওপেনার ডিভাইস’টি আবিষ্কার করেন। তাঁরা জানান, ডিভাইসটি কোনো কম্পিউটারে ইনস্টল থাকলে হ্যাকারের আইপি বা লোকেশন (অবস্থান) শনাক্ত করা যাবে। কম্পিউটারে কোনো ধরনের পোর্টেবল ড্রাইভ ব্যবহার করলে প্রকৃত ব্যবহারকারীর মুঠোফোনে কল বা বার্তা যাবে। শুধু কম্পিউটার নয়, পাসওয়ার্ড নিয়ন্ত্রিত যেকোনো যন্ত্রে এই ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে। এটি পুরোপুরি প্রকৃত ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এর জন্য কোনো ধরনের তার বা ইন্টারনেট সংযোগেরও প্রয়োজন নেই।
রাব্বি হোসাইন জানান, ডিভাইসটি তৈরিতে ট্রান্সফরমার, ট্রানজিস্টর, রেজিস্টর, আইসি (২৫৫০), মাইক্রোকন্ট্রোলার (পিএলসি ১৬ এফ ৬২৮ এ), জিএসএম মডিউল, ম্যাট্রিক্স কন্ট্রোলার, অপটো কপলার ও ক্যাপাসিটর লাগে। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল যুগে প্রত্যেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করেন। কম্পিউটার চালুর প্রয়োজন হলে ব্যবহারকারী বাইরে থাকলেও অন্য কোনো ব্যক্তিকে পাসওয়ার্ড না দিয়েই এই ডিভাইসের মাধ্যমে দূর থেকে চালু করা যাবে। বাসা-বাড়ির দরজা এবং বিল্ডিং অটোমেশনের ক্ষেত্রেও ডিভাইসটি ব্যবহার করা যাবে।’
রাব্বি জানান, ডিভাইসটি তৈরিতে তেমন ব্যয় হবে না। একজন ব্যবহারকারী মাত্র দুই হাজার টাকায় ডিভাইসটি কিনতে পারবেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হলে দাম আরো কমিয়ে আনা সম্ভব।
মো. আব্দুল আলীম জানান, তাঁদের এই আবিষ্কারে শিক্ষকরা অনেক উৎসাহ দিয়েছেন এবং সহযোগিতা করেছেন। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন হবিগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান সব সময় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে। তিন ছাত্রের উদ্ভাবিত ডিভাইসকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব। বর্তমানে সাইবার সিকিউরিটি এবং কম্পিউটার হ্যাকিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নিমতলায় তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মনীষ চাকমা। বিষয়ভিত্তিক পাঁচটি প্যাভিলিয়নে ৫১টি স্টলের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় মেলায়। ই-সেবা, ডিজিটাল সেন্টার, জেলা ব্র্যান্ডিং, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, রুরাল ই-কমার্স, শিক্ষা, তরুণদের উদ্ভাবন ইত্যাদি প্রদর্শনীতে স্থান পায়। মেলার শেষ দিন রবিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির।