১০ মাসে হাতে কোরআন লিখলেন ষষ্ঠ শ্রেণির নুদার - দৈনিকশিক্ষা

১০ মাসে হাতে কোরআন লিখলেন ষষ্ঠ শ্রেণির নুদার

দৈনিক শিক্ষাডটকম, নোয়াখালী |

 দৈনিক শিক্ষাডটকম, নোয়াখালী : ১২ বছর বয়সী নুরে জারিন নুদার। বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েদের থেকে একটু আলাদা। যে বয়সে মেয়েরা মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত। ওই বয়সে খুদে এ শিক্ষার্থী হাতে কোরআন লিখে পার করছে ব্যস্ত সময়। তার গল্প শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। এই মাদরাসা শিক্ষার্থীর কোনো ক্লাসে পড়তে হয়নি প্রাইভেট। মাত্র ১০ মাসে নির্ভুলভাবে সে পুরো আল-কোরআন হাতে লিখেছেন। তার দৃষ্টিনন্দন হাতের লেখা দেখলে যে কারও চোখ আটকাবে। মনে হবে এটি কম্পিউটারে ছাপা লেখা। চোখ জুড়ানো হাতের লেখায় পবিত্র কোরআন লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সে। 

বর্তমানে নুদার বসুরহাট দারুল ইহসান গার্লস মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। তখন ১০ বছর বয়সী নুদার বাড়ির পাশের ইকরা আরাবিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। একদিন হঠাৎ মেয়ের সুন্দর আরবি হাতের লেখা চোখে পড়ে বাবার। এরপর তিনি মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করেন পবিত্র কোরআন হাতে লিখতে। যে কথা, সেই কাজ। মেয়েকে প্রথমে এক রিম খোলা সাদা কাগজ এনে দেন তিনি। সেই থেকে শুরু। এরপর আস্তে আস্তে ১০ মাসে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে নুদার কোরআন লিখে শেষ করেন।

এরপর তার বাবা হাতে লেখা কোরআন শরীফ নিয়ে নুদারের মাদরাসার আরবি শিক্ষক মুফতি মুহা. আবদুল্লাহ আল নোমানের শরনাপন্ন হন। সেই থেকে নুদারের লেখা শেষে তিনি বানান সংশোধন করে পুনঃনিরীক্ষণ করে দিতেন। তার উৎসাহে ও সহযোগিতায় নুদারের লেখা আরও গতি পায়। পরবর্তীতে পান্ডুলিপি থেকে ১০ পারা করে তিন ভাগে পূর্ণাঙ্গ কোরআন বাঁধাই করা হয়। কোরআন লিখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬১১টি এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ ও ৫৫টি বলপেন কলম। মেয়ের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা-বাবা, দাদা-দাদিসহ এলাকাবাসী। মা-বাবার আশা মেয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দেশবাসীর কল্যাণে দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে কাজ করবে। নুরে জারিন নুদার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মওদুদ স্কুল এলাকার ছেলামত মঞ্জিলের মো. নুরুল হুদা মামুনের মেয়ে।

নুরে জারিন নুদার বলেন, বাবা-মায়ের উৎসাহে আমি চতুর্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পবিত্র কোরআন লেখা শুরু করি। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলে আমার লেখা শেষ হয়। আমার এ লেখা দেখে মা-বাবা আমাকে মাদরাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি এখন হিফজ বিভাগে ভর্তি করে দেয়। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

নুদারের বাবা মো. নুরুল হুদা, আমি প্রথমে আমার মেয়ের সুন্দর আরবি হাতের লেখা দেখে খুব আনন্দিত হই। আমারও তার শিক্ষকদের উৎসাহে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সে কোরআন নিজ হাতে লেখা শুরু করে। যখন এক পারা লেখা সম্পন্ন হতো তখন ইকরা আরাবিয়া মাদরাসার শিক্ষক মুফতি মুহা.আবদুল্লাহ আল নোমান আরবি বানানগুলো যাচাই-বাছাই করে পুনঃনিরীক্ষণ করে দিতে। এভাবে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে পুরো কোরআন লিখে শেষ হয়। পরে পুনরায় আবার বানান পুনঃনিরীক্ষণ করে ১০ পারা করে তিন ভাগে বাধাই করা হয়। মেয়ের এমন কাজে আমি গর্বিত। এমন কাজে অন্য ছেলে মেয়েরা উদ্ধুদ্ধ হবে বলেও আমি আশা করি।

মা বিবি ফাতেমা বলেন, আমার মেয়ে নিজ হাতে কোরআন লিখেছে, আমরা তাকে উৎসাহ দিয়েছি। লেখার সময় অনেক সময় মনমানসিকতা অন্য রকম হয়ে যেত, তো লিখবো, লেখে না। আবার মনমানসিকতা ঠিক করে আগ্রহ দিয়ে লিখতে বসত। বিশেষ করে ভালো কাজে শয়তানের প্ররোচনা থাকে। খাতা-কলমে দাগ টানাসহ বিভিন্নভাবে তাকে আমি সহযোগিতা করেছি। চার বছর বয়স থেকে সে নিয়মিত নামাজ পড়ে।

ইকরা আরাবিয়া মাদরাসার নাজেমে তালিমাত, মুফতি মুহা. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কোরআন লেখার যে প্রাচীন নিয়ম রয়েছে। সে অক্ষরে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে নুদার ১০ মাসের প্রচেষ্ঠায় হাতে লিখে সম্পন্ন করেন। ওই সময় আমি তার লেখার তত্বাবধান করি। বোঝার উপায় নেই, এটি হাতে লেখা না, না কম্পিউটারে। তার লেখা কোরআন পুরোটাই আমি পুনঃনিরীক্ষণ করি।

ইকরা আরাবিয়া মাদরাসা মোহতামিম মাওলানা মোতালেব হোসেন পারভেজ বলেন, নুরানি বোর্ডের সমাপনী পরীক্ষায় নুদার পুরো বাংলাদেশে দশম স্থান অর্জন করে। সে একজন মেধাবী ছাত্রী।

বসুরহাট পৌরসভা ৯নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ বি এম ছিদ্দিক বলেন, পবিত্র কোরআন হাতে লেখার উদ্যোগ নিয়ে সম্পন্ন করার কাজটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এতো সুন্দরভাবে কোরআন লিখলেন সেটি আসলেই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা।

ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031669139862061