১২ মাসে বিসিএস শেষ করার ক্রাশ প্রোগ্রাম, জানালেন পিএসি চেয়ারম্যান - দৈনিকশিক্ষা

১২ মাসে বিসিএস শেষ করার ক্রাশ প্রোগ্রাম, জানালেন পিএসি চেয়ারম্যান

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী ১৯ মার্চ হবে ৪১তমের প্রিলিমিনারি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল ৪২তমের প্রিলিমিনারি। চলতি বছর ৬ আগস্ট হতে পারে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি। একসঙ্গে চারটি বিসিএসের তারিখ ঘোষণার কারণ কী জানতে চাইলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘জট খোলার চেষ্টা করছি। কভিডের কারণে একটা জট লেগে গেছে। ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে শেষ না করলে নতুন কিছু শুরু করা যাচ্ছে না।’

প্রতি বছর একটি বিসিএস শেষ করার প্রতিশ্রুতি ছিল পিএসসির। অথচ একটা বিসিএস শেষ করতে চার বছর লেগে যাচ্ছে। গত ২৮ জানুয়ারি ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই বিসিএসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ, পিএসসির কাছে জনপ্রশাসনের চাহিদা জানানোর মাধ্যমে। এভাবে পিএসসি তারুণ্যের মূল্যবান সময় খেয়ে ফেলছে। যে সময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে চাকরিতে ঢোকার কথা, সেই সময় তারা বিসিএসের জন্য বসে থাকে। এতে অপচয় শুধু চাকরিপ্রার্থীদের নয়, হচ্ছে সরকারেরও।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কম সময়েও বিসিএস শেষ করা সম্ভব। এ নজির পিএসসিই দেখিয়েছে। আড়াই বছরে বিসিএস শেষ করার নজির রয়েছে। আড়াই বছর থেকে সেটা দিনে দিনে আরও কমার কথা। কিন্তু না কমে সেটা বেড়েছে। এ দায় পিএসসির।

দীর্ঘ সময় লাগার কারণে পিএসসির দায় কতটুকু জানতে চাইলে সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘পিএসসি শুধু বিসিএসই আয়োজন করে না। ক্যাডার নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে পিএসসি। এসব চাকরির পদোন্নতির বিষয় দেখতে হয়। কখনো এসব চাকরিতে শাস্তির বিষয় আসলে সেখানে পিএসসিকে মতামত দিতে হয়। বিসিএসটা দৃশ্যমান অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে। বাকি কাজগুলো অদৃশ্যমান। কিন্তু এসব কাজের সংখ্যা অনেক। ২ হাজার ১৫৫ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এটাও একটা বিসিএসের সমান। এখানেও লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা আছে। কভিড পরিস্থিতির মধ্যেই এসব পরীক্ষা হয়েছে। কাজেই পিএসসিকে শুধু দায় দিলেই হবে না। বাস্তবতাও দেখতে হবে। আমাদের সামনে যে জট রয়েছে সেটা শেষ করতে পারলে আমরা প্রতি বছর একটা বিসিএস আয়োজন ও শেষ করতে পারব। চলমান চারটি বিসিএসের মধ্যে তিনটি এ বছরই শেষ করা সম্ভব হতে পারে।’

পিএসসির পাশাপাশি সরকারও চাচ্ছে বিসিএসের সময় কমিয়ে আনার জন্য। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং সরকারের উপসচিব ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য সরকার একটা কর্মজীবন পরিকল্পনা নীতিমালার (ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পলিসি) খসড়া করেছে। সেখানে সর্বোচ্চ ১৫ মাসে বিসিএস শেষ করার কথা বলা হয়েছে। পিএসসি সুপারিশ করার পর পুলিশি তদন্ত, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই করা হবে তিন মাসে। সব মিলিয়ে ১৮ মাসে একটি ব্যাচের নিয়োগ শেষ করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে জনপ্রশাসন।

বিসিএসে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ কীজানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখায় এবং ভাইভাতে আমাদের দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এখানে জোর করার কোনো সুযোগ নেই। এক দিনে কতজনের ভাইভা নেওয়া সম্ভব? ভাইভাতে একজনের মেধা যাচাই করতে হলে একটা সময় দিতে হয়। ইচ্ছা করলেই সেই সময় কমানো যায় না। ৪০তম বিসিএসের ১০ হাজার লোকের ভাইভা নেওয়া শুরু হয়েছে। ১০টা বোর্ড একসঙ্গে ভাইভা নিচ্ছে। ১০টা বোর্ড করতে হলে ১৫০ থেকে ১৬০ জন এক্সপার্ট লোকের প্রয়োজন হয়। ১০ হাজার জনের ভাইভা নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। যখন ভাইভা চলে তখন অন্য কাজের সুযোগ সীমিত থাকে। তারপর আছে ৪১তম বিসিএস। ৪২তম বিসিএসে একটু সুবিধা পাওয়া যাবে। এটা বিশেষ বিসিএস। কিন্তু এই বিসিএসেও ভাইভা লাগবে। আমাদের ১৫ সদস্যের মধ্যে একজনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে। আরেকজন সদ্য হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন কভিডের চিকিৎসা শেষে। বাকি ১৩ জন ভালোই আছেন। কিন্তু সবাইকে দিয়ে আমি বোর্ড করতে পারছি না। নিরাপদে থাকার জন্য দুই একজনকে বোর্ডের দায়িত্ব থেকে মুক্ত রাখতে হয়। হঠাৎ করে একজন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। অন্য কারও রিপ্লেস করা দরকার হতে পারে। পূর্বনির্ধারিত ভাইভা থাকলে চাকরি প্রার্থীরা চলে আসবেন। সেই সময় বিকল্প একজন কমিশন সদস্যকে দিয়ে কাজ চালাতে হয়। কাজেই ভাইভার দিন কমানোর কোনো সুযোগ নেই।’

সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা চালু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ভারত ও পাকিস্তানে এখনো এ ব্যবস্থাই চালু রয়েছে। ভারতে প্রতি বছর একটি ব্যাচের নিয়োগ হয়। বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে শুরু করে যোগদানও হয়ে যায় এক বছরের মধ্যে। এরপর তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণে চলে যায়। আর বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো অনেক সময় নেওয়া হয় প্রার্থী বাছাইয়ে।

অনেক সময় প্রার্থীরা প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজ শুরু করেন। এতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য পিএসসি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেজানতে চাইলে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই বছর যদি তিনটি পরীক্ষার শেষের কাছাকাছি আমরা যেতে পারি, তাহলে পরের বছর থেকে সময়টা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা একটা রোডম্যাপ করেছি। রোডম্যাপ করতে গিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেছি আগের পরীক্ষাগুলোর জন্য আমরা কী করতে পারি। প্রিলিমিনারির জন্য কত সময় লাগবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য কত সময় দরকার। এরপর ভাইভা শেষ করে কত দিনের মধ্যে আমরা সুপারিশ করতে পারব। একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়াবদ্ধ খসড়া পরিকল্পনা করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেই তো আমি বলতে পারি না, কাল থেকে ভাইভা। আমাদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাইভায় ডাকতে হয়। আমরা খুবই টাইট শিডিউলে চলতি বছরটা পার করব। এক বছরের মধ্যে অনেকটাই গুছিয়ে আনব। তিন বছরের কাজ আমরা এক বছরে করার পরিকল্পনা করেছি। এক বছরের মধ্যে ৪১ হয়ে যাবে, ৪২-এর স্পেশাল এবং ৪৩-এর কাজ এগিয়ে যাবে। ৪৩তম বিসিএসটা এক বছরের মধ্যে শেষ করা যাবে না। দুই মাস চলে গেছে। সময় বাড়াতে হয়েছে। চলমান বিসিএস শেষ করে আমরা যখন ৪৪তম বিসিএসে যাব তখন ওই বিসিএস এক বছরে শেষ করব। তখনো আমাদের অন্যান্য কাজ করতে হবে। কিন্তু বিসিএসের চিন্তা থাকবে একটা নিয়ে। ১২ মাসের সঙ্গে হয়তো দুই-এক মাস যোগ-বিয়োগ হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য থাকবে এক বছরে বিসিএস শেষ করার।৪৪তম বিসিএস থেকে যদি এক বছরে একটা বিসিএস শেষ করতে হয়, তাহলে লেগে থাকতে হবে। কেউ যদি মনে করেন একটা বিসিএস শেষ হয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নেব। তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে না।’

বিসিএস উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে অনেকে চাকরি পায় না। এমনকি নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেও তাদের সুপারিশ করা যায় না। এই অবস্থায় পড়ে বিসিএস পাস বেকার সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও কথা বলেছেন পিএসসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বিসিএস উত্তীর্ণদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি দেওয়ার বিষয়টি দেশে একটা বড় ঘটনা। এতে করে সরকার কোয়ালিটি জনবল পাচ্ছে। বেকাররা পাচ্ছেন চাকরি। কোনো দপ্তরে একটা পোস্ট খালি হলে সঙ্গে সঙ্গেই জনবল নিয়োগ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করা যায় না। বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এতে দীর্ঘ একটা সময় লাগে। এই পদ্ধতিতে একটা পদ খালি হলেও সেখানেই একজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা যায়। একটা বিসিএস শেষ করে যখন নতুন আরেকটি বিসিএস শুরু করতে হয় তখন পুরনো বিসিএসটা আর টানা যায় না। অর্থাৎ আগের বিসিএস পুরোপুরি শেষ না করে নতুনটায় হাত দেওয়া যায় না। বিসিএস উত্তীর্ণ সবার চাকরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বিসিএস আরও দীর্ঘায়িত হবে।’ 

একসময় বিসিএসের প্রশ্নপত্র নিয়মিত ফাঁস হতো। দেশের সর্বোচ্চ নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে সর্বত্র নেতিবাচক আলোচনা হতো। এই অবস্থা থেকে বের হয়েছে পিএসসি। কিন্তু তারপরও অনেকে মনে করেন তদবিরে কাজ হতে পারে।

তদবির আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে? জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক সময় ব্যক্তিগত কারণে বা সম্পর্কের কারণে অনেকে তদবির করেন। তাদের বুঝিয়ে বলি, তদবির করবেন না। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা আগেই জানেন আমি তদবিরে সাড়া দেব না। অনেক সময় রাগ করতে হয়। কিন্তু একটা বিষয় স্বতঃসিদ্ধ যে, পিএসসিতে তদবিরের কোনো সুযোগ নেই। একই সঙ্গে তদবির করাও অন্যায়। অনেকে সম্পর্কের জোরে বলে ‘গরিব মানুষ, চাকরিটা হলে ভালো থাকবে।’ মনে করুন কোনো একটা পদে ৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ৫০ জনকে সুপারিশ করার জন্য বাছাই করা হলো। কেউ যদি ৫১ নম্বরের জন্য তদবির করেন, তাহলে কী তাকে চাকরি দেওয়া সম্ভব? হয়তো সে গরিব, খুবই গরিব। কিন্তু যাকে বাদ দেওয়া হবে সেতো আরও গরিব হতে পারে। যদি আপনি তাকে চাকরি দিতে চান তাহলে যারা যোগ্যতার বলে চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। এটা রাষ্ট্রীয় অবিচার। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পিএসসি এই অবিচার করতে পারে না। পিএসসিতে কাউকে কোনো সহায়তা করার কোনো সুযোগ নেই। লিখিত পরীক্ষায় হাজার হাজার খাতা থাকে। সেখানে কোনো নাম-ঠিকানা থাকে না। কোড ব্যবহারের কারণে নির্দিষ্ট কারও খাতা বের করা সম্ভবই না। দেখা গেল কমিশন সদস্যদের নেতৃত্বে ১০টা ভাইভা বোর্ড গঠন করা হলো। বেলা ১১টায় ভাইভা শুরু হবে। ভাইভা শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সদস্যরা জানতে পারেন তিনি কোন বোর্ডে বসবেন। এক্সপার্ট কে কোন বোর্ডে থাকবেন তারাও সেটা জানেন ভাইভার দিন। মোট ১০টা ভাইভা বোর্ডে ১৬০ জনের মতো লোক থাকেন। এখন কোনো চাকরিপ্রার্থী যদি তার ভাইভা বোর্ডে কে কে থাকবেন তা বের করতে চান, তাহলে ১৬০ জনকে জনে জনে জিজ্ঞাসা করতে হবে তার বোর্ড কোনটি। সদস্য, এক্সপার্ট এমনকি কমিশন সদসরাও জানতে পারেন না কে কোন বোর্ডে বসবেন। কাজেই তদবিরের কোনো সুযোগই  নেই। পদ্ধতিগত কারণেই তদবির করা সম্ভব নয়। পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনের সময় থেকে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর ফলে তদবির বন্ধ হয়েছে। সূত্র: দেশ রূপান্তর। 

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042390823364258