১৩ বছর বয়সেই এইচএসসি পাস! - দৈনিকশিক্ষা

১৩ বছর বয়সেই এইচএসসি পাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

‘পাঁচ বছরের সব জান্তা রাতুল’ শিরোনামে দেশের অনেক সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ছোট্ট শিশু রাতুল ১৩ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আবারও তাক লাগিয়েছে চান্দিনা উপজেলা তথা কুমিল্লাবাসীকে।

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয়ে পিছিয়ে নেই চান্দিনা উপজেলা সদরের প্রধান দুইটি প্রতিষ্ঠান। চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ থেকে মাত্র ২৪ শতাংশ হারে শিক্ষার্থীদের পাশ করার পরও ওই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে একমাত্র পাশ করেন রাতুল আলম। ওই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে নিয়মিত ১৫জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেও রাতুল ৪.০৮ পেয়ে পাশ করে।

রাতুল আলম চান্দিনা উপজেলা সদরের হাসপাতাল রোডের ডা. মোর্সেদ আলম ও মাতা নাছরিন আলম এর বড় ছেলে। ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারী জন্ম নেয় রাতুল। ২০০৯ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে মা-বাবা কোলে থেকেই পঞ্চম শ্রেণীর লেখাপড়া শেষ করে ওই শিশু।

যে বয়সে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু হয় সেই বয়সে ডা. মোর্সেদ আলম ও তার স্ত্রী ছেলেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়ান। রাতুলের কাছ থেকে শিক্ষকদের সকল প্রশ্নের উত্তর মিললেও সরকারি বিধি না থাকায় ২০১০ সালে ৬ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালে পাশ্ববর্তী দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর ভয়েজার ইংলিশ মিডিয়াম নামের একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ওই বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাশ করে রাতুল।

২০১২ সালে চান্দিনার কেরনখাল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ওই বছর জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাশ করে ২০১৩ সালে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয় সে।

ওই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ১১ বছর বয়সে একই স্কুল থেকে ‘এ গ্রেড’ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় শিশু রাতুল।

২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষে চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে ওই কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ১৫জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করলেও একমাত্র রাতুল ছাড়া আর কেউ পাশ করেননি।

জিপিএ-৫ না পাওয়ায় হতাশ রাতুল। নির্ধারিত পয়েন্ট না থাকায় মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। এ নিয়ে সরকারের শিক্ষা পদ্ধতিকে দায়ী করেন তার অভিভাবক।

রাতুল এর মা নাছরিন আলম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে যায়নি রাতুল। ছোট বেলায় যখন তার মুখে কথা ফুটেছে সে থেকে পড়ালেখা শুরু হয় তার। মাত্র ৫ বছর বয়সেই সে পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজী, গণিত থেকে শুরু করে পুরো সিলেবাস সম্পন্ন হয়। তাই ২০১০ সালে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম তাকে। কিন্তু কোন বিদ্যালয়ই তাকে ভর্তি নেয়নি। অবশেষে বেলাশহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভর্তি করানোর জন্য আশ্বাস দিলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি চেয়েছিলেন। এ দেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে ৬ বছরের নিচে কোন শিশুকে প্রথম শ্রেণীতেই ভর্তি করা সম্ভব না বিধায় চান্দিনার ইউএনও রাতুলকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে পরের বছর দাউদকান্দি উপজেলা থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করাই।

২০১২ সালের মধ্যে সে অষ্টম শ্রেণীর সিলেবাস সমাপ্ত হলে ওই বছর তাকে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি করাই। সে বছর জেএসসি পাশ করে আর থেমে থাকতে হয়নি তার। ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করে রাতুল আলম। আমার ছেলে মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং যে কোন পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পারলে অবশ্যই চান্স পাবে। কিন্তু সরকারের পয়েন্ট ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতিতে আবেদন করারই কোন সুযোগ নেই। যার ফলে বদলে যাচ্ছে তার স্বপ্ন। কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয়ের পরও আমার ছেলে এইচএসসিতে ৪.০৮ পেয়েছে তাতেই খুশি থাকতাম, যদি মেডিকেল আবেদনের সুযোগ থাকতো।

ফলাফল বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে পয়েন্টের বিষয়টিও বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান গণিত বিষয়ে অনার্স-মাষ্টার্স সম্পন্ন করা নাছরিন আলম।

রাতুল এর বাবা ডা. মোর্সেদ আলম জানান, ‘সরকার সব সময় বলে আসছেন, লেখাপড়ার বয়স নেই। কিন্তু আমার ছেলেকে নিয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়েছি। ৮ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি করানোর জন্য যেখানেই গিয়েছি সেখানেই বিড়ম্বনায় পড়েছি। অবশেষে তার জন্ম সনদ, অষ্টম শ্রেণীর পাশের সনদ ও সিভিল সার্জন কর্তৃক ডাক্তারী সনদ নিয়েও ওই বয়স দেখিয়ে অষ্টম শ্রেণীর রেজিষ্ট্রেশন করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে তার নির্ধারিত বয়সের চেয়ে আরও চার বছয় বাড়িয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়েছে। পয়েন্ট ও বয়স জটিলতায় আমার ছেলের মত দেশের আরও অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের মেধা যাচাই করতে পারছে না। এ ব্যাপারে সরকারের শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন চান ডা. মোর্সেদ আলম।

চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, রাতুল এর বয়স ১৩ বছরের বেশি হবে না। কিন্তু শিক্ষা পদ্ধতির কারণে তার বয়স বাড়াতে হয়েছে। সার্টিফিকেটে তার বয়স বাড়ালেও তাকে যে কেউ দেখলেই প্রকৃত বয়স অনুমান করতে পারবে। রাতুল আমাদের কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে একমাত্র পাশ করে সম্মানও বাঁচিয়েছে। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ তার জন্য শুভ কামনা করি।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036768913269043