১৫ মাসে মাদরাসায় ধর্ষণের শিকার ৬২ ছাত্র, মৃত্যু ৩ - দৈনিকশিক্ষা

১৫ মাসে মাদরাসায় ধর্ষণের শিকার ৬২ ছাত্র, মৃত্যু ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। অভিযোগ কখনও শিক্ষক, কখনও সিনিয়র ছাত্র বা মাদরাসা সংশ্নিষ্ট কারও বিরুদ্ধে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর মাদরাসায়  ধর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ৫২ শিশু। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছে। এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে আরও ১০ শিশু।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দৈনিক শিক্ষাডটকম ছাড়া আর কোনো পত্রিকা ছেলেশিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে এখনও  ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার করে না। অনেকেই মনে করেন, এটা তো বলাৎকার, ধর্ষণ না। গুরুতর কোনো অপরাধ না। আসলে ধর্ষণ তো ধর্ষণই, তা সে ছেলেশিশুর সঙ্গে হোক বা মেয়ে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আইনের মাধ্যমে সমস্যাটিকে শনাক্ত করে সমাধান খুঁজতে হবে। সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে প্রচলিত আইন পর্যালোচনা করে ছেলেশিশু ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন তারা। 

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) সোহেল রানা বলেন, ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা বন্ধে আমরা ফেসবুক পেজগুলোর মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক নানা বার্তা দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে না পুলিশ। তবে এ সমস্যা রোধে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।

সংশ্নিষ্টরা জানান, মাদরাসাগুলোয় দিনের পর দিন ছেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চললেও তা বন্ধে এখনও তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বিপথগামী কিছু শিক্ষক ও মাদরাসা সংশ্নিষ্টরা এটাকে অপরাধ বলেই গণ্য করেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা দেন জড়িতরা। আবার ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে রেখে তা ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে শিশুদের জিম্মি করার ঘটনাও রয়েছে। গত ৭ এপ্রিল সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বাজারগ্রামের কফিল উদ্দিন হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার

করে পুলিশ। তিনি এক শিশুর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল ফোনে আরও কয়েক শিশুর সঙ্গে একই অপকর্মের ভিডিও পাওয়া যায়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াছিন আলম চৌধুরী জানান, ধর্ষণের দৃশ্য তিনি মোবাইল ফোনে ধারণ করে ওই শিশুদের ভয় দেখিয়ে আবারও বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন।

এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসার হোস্টেল সুপার নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, কবে কোন ছাত্রকে ধর্ষণ করবেন রীতিমতো তার রুটিন তৈরি করেছিলেন তিনি। কোনো ছাত্র রাজি না হলে তার ওপর চালানো হতো নির্যাতন। পরে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তাদের মধ্যে চার ছাত্র আদালতে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে নাছিরের পাশবিকতার বর্ণনা দেয়।

নয় বছর ধরে ধর্ষণ :২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাজধানীর দক্ষিণখানের মাদরাসাশিক্ষক ইদ্রিস আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে এক শিশু নয় বছর ধরে ধর্ষণ চালানোর অভিযোগ করে। ২০১০ সালে শিশুটি মাদরাসায়  ভর্তি হয়। তখন তার বয়স ১২ বছর, যৌননির্যাতনের শিকার তখন থেকেই। ৯ বছর পর শিশুটি তার চাচাত ভাইকে ঘটনাটি জানায়। এরপর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মাদরাসা বোর্ডকে শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে :মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এমন ঘটনা অনেক হচ্ছে, তবে তা জানা যাচ্ছে কম। যখন কেউ মারা যায় বা নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে তখনই কেবল তা প্রকাশ্যে আসে। মাদরাসা বোর্ডকে এ ব্যাপারে শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। কেন এসব ঘটছে তা খুঁজে বের করতে হবে। জড়িতদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, সেখানে এমন কোনো কমিটিও নেই যেখানে নির্যাতনের শিকার শিশুরা কথা বলতে পারবে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র শিশুরা মাদরাসা পড়ে বলে তাদের নানা অজুহাতে দমিয়ে রাখাও সহজ হয়।

আইনে অস্পষ্টতা :সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ছেলেশিশুদের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে শিশু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। তাই ধর্ষণের শিকার শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে- উভয়ের ক্ষেত্রে ওই আইনে বিচার করা যাবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা প্রযোজ্য হবে। সেখানে এই অপরাধকে 'অস্বাভাবিক যৌনাচার' হিসেবে আখ্যা দিয়ে যাবজ্জীবন সাজার বিধান রয়েছে। তবে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় দেওয়া ধর্ষণের সংজ্ঞায় শুধু নারীর কথা বলা হয়েছে। তাই এটি সংশোধন করে নারী ও পুরুষ উভয়ের উল্লেখ করা দরকার।

 

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033750534057617