বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ হাজার শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করা সাড়ে তিন লাখ চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ সুপারিশ আইনি জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা মামলা ঠুকে দেওয়ায় এ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সম্প্রতি হাইকোর্টের যে বেঞ্চে এ রিট মামলাটি চলছিলো তা ভেঙে দেওয়ায় এ অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। মামলাটির শুনানিতে আরো দেরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ১৫ হাজার নতুন শিক্ষক পদে কবে নাগাদ সুপারিশ করা হবে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না কেউ।
জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (এনটিআরসিএ) প্রকাশিত বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩ লাখ ৪৩ হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী আবেদন করেন। এ হিসেবে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির প্রতিটি পদের জন্য চাকরি প্রত্যাশীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ জনের বেশি। গত মার্চ মাসেই এ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল এনটিআরসিএর। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা আটকে যায়। এপ্রিলেও এসব প্রার্থীর সুপারিশ করা যাবে কী না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এখন শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন।
এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানান, আইসিটি শিক্ষক পদে ছয় মাসের ডিপ্লোমাধারী নিবন্ধিত প্রার্থীরা এবং একই ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইসিটি শিক্ষক পদে ইতোমধ্যে নিয়োগ পাওয়া ইনডেক্সধারী শিক্ষক-প্রভাষকরা পরবর্তী নিয়োগগুলোতেও সুপারিশ পেতে আদালতে মামলা করেছেন। যদিও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালায় ছয় মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি শিক্ষক পদে নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালাতেও ছয় মাসের ডিপ্লোমায় আইসিটি শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। তাই যেসব প্রার্থী ছয় মাসের ডিপ্লোমা নিয়ে আইসিটি শিক্ষক হতে নিবন্ধিত হয়েছিলেন, আর যারা ইতোমধ্যে আইসিটি শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তারা নতুন করে নিয়োগ পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছেন।
বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল নিয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ছয় মাসের ডিপ্লোমায় নিবন্ধিত প্রার্থীরা মামলা করায় এ বিষয়ে মামলা করেছেন। জটিলতা নিরসনে আমরা গত সপ্তাহেই শুনানি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাইকোর্টের যে বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিলো, সে বেঞ্চ ভেঙে দেয়া হয়েছে। নতুন বেঞ্চ গঠন না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়টি কবে নিষ্পত্তি হবে তা বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ নিয়ে নানা জটিলতা আছে। স্কুল-কলেজ এক রকম, মাদরাসায় এক রকম, আবার কারিগরিতে এক রকম। আমরা অধিদপ্তরগুলোতে প্রার্থীদের সনদগুলো পাঠিয়ে তাদের মত নিচ্ছি। এতে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা নিষ্কণ্টকভাবে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করতে চাই।
এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ছয় মাসের ডিপ্লোমায় ইনডেক্সধারীরা ইতোমধ্যে শিক্ষকতা করছেন। তারা এমপিওভুক্ত আছেন। কিন্তু তারাই আবার নিয়োগ পাওয়ার জন্য মামলা করেছেন। ফলে বেকারদের নিয়োগটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১৫ হাজার ১৬৩ শিক্ষক পদে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। এরমধ্যে এমপিও পদ ছিলো ১২ হাজার ৮০৭টি ও ননএমপিও পদ ছিলো ২ হাজার ৩৫৬টি। এসব পদে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৭টি আবেদন পাওয়া গেছে বলে এনটিআরসিএকে জানিয়েছে টেলিটক।
এদিকে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা নিবন্ধিত প্রার্থীরা বলছেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে নিয়োগ সুপারিশ পাইনি। বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছি। আশা ছিলো ঈদের আগে নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হবো। কিন্তু ফলই এখনও দেয়া হয়নি। আমরা দ্রুত নিয়োগ সুপারিশ চাই।
