কিশোর-কিশোরীর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকেই দায়ী করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এজন্য ১৮ বছরের আগে ফেসবুক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার আইন তৈরি করে সরকারকে তা বাস্তবায়ন করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (০১ মে) নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজঘাট এলাকার পাথরের ওপর থেকে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের (১৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাসফিয়ার পরিবারের দাবি,আদনান মির্জা নামে এক ছেলের সাথে মাসখানেক আগে ফেসবুকে পরিচয় হয় তাসফিয়ার। সেই থেকে ছেলেটির সাথে যোগাযোগ তাসফিয়ার।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে মানুষের সামাজিক মেলামেশার পরিসর ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। বেড়েছে সাইবার জগতে ‘ভার্চুয়াল’ বন্ধুত্ব। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা বেশি ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করছে। তারা ঘরে বসে দূরের অপরিচিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করছে অনায়াসে। এ থেকেই বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল করিম বলেন, ‘এই জগৎটা একটা কল্পনা বা ফ্যান্টাসির মতো। তাই সেখানে বেশি সময় কাটালে বাস্তববোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মানুষ। এ প্রভাবটা বেশি পড়ছে কিশোর-কিশোরীর ওপর। ফেসবুক এখন তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। তাইতো ক্রমশ অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে।’
তার মতে, একজন মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কোনো প্রয়োজন নেই ফেসবুক ব্যবহার করার। এজন্য ১৮ বছরের আগে ফেসবুক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির আইন তৈরি করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে কিশোর-কিশোরীর অপরাধের মাত্রা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
ড. মো. ওবায়দুল করিম আরও বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে মোবাইল নিতে পারবে না, দেশে এরকম একটি আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। শুধু শ্রেণিকক্ষে না, শিক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষার হলেও মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করে। দিন দিন কিশোর বয়সীদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া।’
এসব কিশোর বয়সীদের অপরাধ দমাতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
চবির আরেক সহযোগী অধ্যাপক পারভীন সুলতানা বলেন, ‘আমরা ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতেই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেলছি। সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে অনেকে। কখনো কখনো রাগ মেটাতেও ব্যক্তিগত তথ্য কুৎসার আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে। এসব সাইবার ক্রাইম দমাতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’
কিশোর অপরাধ কমাতে পরিবারের ভূমিকা মূখ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার থেকেই এ বিষয়ে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ নতুন পোশাক পড়লে এটির উৎস কোথায় সেটি বের করতে হবে। ফেসবুক ব্যবহারের ওপর পিতা-মাতার নজরদারি রাখতে হবে। সন্ধ্যার মধ্যে ক্লাস শেষ করে ঘরে ফিরেছে কি না, এ বিষয়ে তদারকি করা বাঞ্চনীয়। তবেই অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।