২৫ বছর বেতন পান না বগুলাডাঙ্গী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

২৫ বছর বেতন পান না বগুলাডাঙ্গী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি |

স্কুল আছে, শিক্ষক আছেন, আছে শিক্ষার্থীও। তবুও ২৫ বছর ধরে স্কুলটির কোনো শিক্ষক বেতন পান না। আবার বেতন না পাওয়ার কারণে কেউ স্কুল ছেড়েও যান না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কোনো গড়িমসিও করেন না। ফলে প্রতি বছরই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করছে।

স্কুলটির নাম বগুলাডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সদর উপজেলার ৭নং চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ অন্তর্গত বগুলাডাঙ্গী গ্রামে এটি অবস্থিত। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামটির উদ্যমী তরুণ শীতেন চন্দ্র বর্মণ নিজের পৈতৃক ৪২ শতক জমি দান করে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি নিজেও স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

পরে আরও তিনজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। তারা হলেন- লিপি রায়, আনন্দ মোহন ও সুমিত্রা রানী। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয়। এরপরও স্কুলের একজন শিক্ষকও বেতন পাননি। বেতন না পাওয়ার পেছনে কারণ হলো একটি মামলা- জানালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শীতেন চন্দ্র বর্মণ।

মামলাটি করেছিলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক আনন্দ মোহন। তিনি স্কুলে কিছু দিন অনিয়মিত হয়ে পড়লে স্কুল পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আনন্দ মোহন মামলা ঠুকে দেন। সেই মামলা চলমান থাকার কারণেই স্কুল সরকারিকরণ হওয়ার পরেও বেতন তুলতে পারছেন না কোনো শিক্ষক।

বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মীমাংসার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। জেলা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্তও করেন। তারপরও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। শিক্ষকরাও বেতন পাচ্ছেন না। কবে পাবেন তারও কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।

প্রধান শিক্ষক শীতেন চন্দ্র বর্মণ বলেন, স্কুলটির জন্য সব শেষ করেছি। নিজের জমি দিয়েছি। বাড়ি থেকে টাকা এনে খরচ চালিয়েছি। ছোট ছোট বাচ্চার মায়ায় স্কুল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতেও পারিনি। আশা ছিল একদিন স্কুলটি সরকারিকরণ হবে।

সেটাও হলো, তবুও আজ নিজেদের কারণে বেতন পাচ্ছি না। শিক্ষক সুমিত্রা রানী বলেন, এত বছর নিজের খেয়ে স্কুলে শ্রম দিচ্ছি, একটাই আশা ছিল একদিন বেতন পাব। আর কত দিন এভাবে চলা সম্ভব? স্কুলের সামনেই বাড়ি করে থাকছেন অশেষ চন্দ্র বর্মণ।

তিনি বলেন, অবাক হয়ে যাই, ঝড়-বৃষ্টি যাই থাক স্কুল কখনো বন্ধ হয় না। বেতন ছাড়াই যে তারা এত বছর শিক্ষকতা করছেন এটাই অবাক করে তাকে।

এ বিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা জানান, স্কুলটি সরকারি হয়েছে। তবে শিক্ষকরা এখনো সরকারি হননি।

অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রিপোর্ট পাঠানোর সময় আমরা স্কুলটির মামলা চলমান আছে মর্মে মন্তব্য কলামে উল্লেখ করি। ফলে শিক্ষক নিয়োগ তালিকা থেকে নাম বাদ যায়। তিনি বলেন, তাদের সমস্যাটি সমাধান হয়ে গেলেই আমরা শিক্ষক তালিকা পাঠাব।

একটি সূত্র জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শীতেন চন্দ্র বর্মণ শিক্ষক নিয়োগের নামে বেশ কজনের কাছে টাকা-পয়সা নিয়েছেন এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আনন্দ মোহন মামলা করেন। তিনি জানান, আমি প্রথম থেকেই স্কুলে ছিলাম।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ মার্চ যখন স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয় তখন প্রধান শিক্ষক শীতেন আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চান। আমি ২ লাখ টাকা দিতে সম্মত হই। কিন্তু এতে তিনি রাজি হননি। ম্যানেজিং কমিটি আমার পরিবর্তে অন্য এক শিক্ষক নেয়। বাধ্য হয়ে আমি ওই বছর আগস্টে মামলা করি।

পরে আমাকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ডেকে নেন। সব শুনে তিনি আমার নাম গেজেটভুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। অভিযোগের বিষয়ে শীতেন চন্দ্র বর্মণ বলেন, স্কুলটি যখন স্থাপিত হয় তখন কয়েকজন শিক্ষক টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। আমিও জমি দান করেছি। পরে স্কুলে নতুন শিক্ষক নেয়া হয়।

স্কুলটি গেজেটভুক্ত হলে কমিটি নতুন শিক্ষকদের কাছে টাকা নিয়ে পুরনো দেনা শোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আনন্দ মোহনের কাছেও টাকা চেয়েছি। তবে ১০ লাখ টাকা নয়। স্কুলের দেনা শোধ করতে পারছি না বলে আমাকে যেখানে-সেখানে হেনস্তা হতে হচ্ছে। আনন্দ মোহন ও লিপি এখন কলকাঠি নাড়ছেন। কী করব বুঝতে পারছি না।

গত ৭ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এক অফিস আদেশে অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগপত্রে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯টি বিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষকের অস্থায়ী নিয়োগ প্রদান করা হলেও সে তালিকায় বগুলাডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম ছিল না।

শিক্ষা বিভাগের কাছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় একটি সুষ্ঠু সমাধান আশা করছেন সবাই।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011850833892822