২৫ মার্চ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা - দৈনিকশিক্ষা

২৫ মার্চ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা

প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন |

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান এবং ভারত রাষ্ট্র গঠিত হয়। দেড় হাজার মাইলের ব্যবধানে দু’টি প্রদেশ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমম্বয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র। পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকেই পশ্চিম অংশ পূর্ব অংশের বাঙালিদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে এবং মানুষকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শোষণ করে আসছিলো। আর সে কারণেই বাঙালিরা এই শোষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করে। এসব আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা। তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফলেই জনগণ ধীরে ধীরে নিজেদের দাবি ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে  ওঠে যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়।

বাঙালিদের এই জাগরণে এদেশের লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, সকল পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, চলচ্চিত্র ও নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালিদের দমিয়ে রাখার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের যেকোন হীন-চক্রান্তের বিরুদ্ধে তারা বারবার সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জনসাধারণকে অনুপ্রেরণা ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য বুদ্ধিজীবীরা শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়েন। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী বাছাই করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে। এ ছাড়া যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানের পরাজয় যখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে তখন বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যেই বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠনের অধিকার অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে কোনোভাবেই রাজি ছিলো না। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ যদিও জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত ছিলো, কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সামরিক বাহিনীর অফিসারদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বুনতে শুরু করে। ১ মার্চ  তারা কোনো কারণ ছাড়াই ৩ তারিখের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল করে। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ধৈর্য্য সীমা ছাড়িয়ে যায়।

সারা দেশে বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু সারা দেশে ৫ দিনের হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার আহ্বানে গোটা পূর্ব-পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৫ দিন হরতাল শেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার আগেই তার দেয়া চার দফা দাবি (সামরিক আইন প্রত্যাহার, সামরিক বাহিনীকে সেনানিবাসে ফিরিয়ে নেয়া, আন্দোলনের সময় নিহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা অনুসন্ধান করা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা) বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তার এই ভাষণ গোটা জাতিকে স্বাধীনতার আকাঙ্খায় উত্তাল করে তোলে।

২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ ও ইপিআরসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করে কারাগারে পাঠায়।

বিভিন্ন সূত্র ও দলিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রমাণিত হয় যে, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছিলো অন্য কেউ তার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করে শোনানোর অনেক পূর্বে। ২৫ মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙে গেলে ইয়াহিয়া গোপনে ইসলামাবাদে ফিরে যান এবং গণহত্যা চালানোর পর পাকিস্তানি সেনারা সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুসহ তার পাঁচ বিশ্বস্ত সহকারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে যান। মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ: ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান।

বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানী সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক’।

২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে ধবংসযজ্ঞ শুরু হয়। গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করার আগেই বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করা হয়। হত্যাকাণ্ডের খবর যাতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে না পৌঁছায় সে লক্ষ্যে ২৫ মার্চের আগেই বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারপরও সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করে ওয়াশিংটন পোস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে এই গণহত্যার খবর জানিয়ে দেয়। যদিও এই হত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলো ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিলো তাদের বিশেষ লক্ষ্য। এটি ছিলো সুপরিকল্পিত গণহত্যা এবং একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করবার নিষ্ঠুরতম প্রক্রিয়া। বেপরোয়া হত্যা, গণধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ এবং নিরাপরাধ মানুষ বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের বন্দি করে হত্যা করে মানবতা বিরোধী অপরাধকর্ম চলায়। দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষককে ২৫ মার্চের রাতেই হত্যা করা হয়।

পরিকল্পিত গণহত্যার মুখে সারা দেশে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধ যুদ্ধ। এদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে স্বাধীন করতে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। এ সময় জীবন বাচাঁনোর জন্য কয়েক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীর সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণসহ প্রায় ৯৫ হাজার আধুনিক সমরাস্ত্র প্রদান করে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় নয় মাস বাংলাদেশ ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একান্ত প্রচেষ্টায় অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। 

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের ৪ তারিখ থেকে ঢাকায় নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রশিক্ষিত আল-বদর এবং আল-শামস বাহিনী স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করে। ডিসেম্বরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে ১০ হতে ১৪ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে পরিকল্পনার মূল অংশ বাস্তবায়ন করে। চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদেরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসরেরা জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।

তাদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ অন্যান্য আরো অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে তাদের ওপর বীভৎস নির্যাতন চালায়। ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরোচিত ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিলো।

পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশিয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়ের বাজারসহ বিভিন্নস্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রাখে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। পাকিস্তান বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিলো, লাশজুড়ে ছিলো আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে ধাঁরালো অস্ত্রদিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি।

২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অসংখ্য স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর কর্তৃক শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র), ড. মুনির চৌধুরী (বাংলা), ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা), ড. আনোয়ার পাশা (বাংলা), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস), ডঃ জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরদা (ইংরেজি), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা), ড.  এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা), হুমায়ুন কবীর (ইংরেজি), রাশিদুল হাসান (ইংরেজি), সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা), ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান), এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা), শরাফত আলী (গণিত), এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা), অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (পদার্থবিদ্যা), এম এ সাদেক (শিক্ষা), এম সাদত আলী (শিক্ষা), সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস), গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস), এম মর্তুজা (চিকিৎসক)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হাবিবুর রহমান (গণিত), ড. শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত), মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)। চিকিৎসক, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ), ডা. আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ), ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ, ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরী, ডা. হুমায়ুন কবীর, ডা. আজহারুল হক, ডা. সোলায়মান খান, ডা. আয়েশা নাদেরা চৌধুরী, ডা. কসির উদ্দিন তালুকদার, ডা. মনসুর আলী, ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা, ডা. মফিজউদ্দীন খান, ডা. জাহাঙ্গীর, ডা. নুরুল ইমাম, ডা. এস কে লালা, ডা. হেমচন্দ্র বসাক, ডা. ওবায়দুল হক, ডা. আসাদুল হক, ডা. মোসাব্বের আহমেদ, ডা. আজহারুল হক (সার্জন), ডা. মোহাম্মদ শফী (দন্ত চিকিৎসক)। সাংবাদিকশহীদুল্লাহ কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, সিরাজুদ্দীন হোসেন, আ ন ম গোলাম মস্তফা; আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার), ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ), রণদা প্রসাদ সাহা (সমাজসেবক), যোগেশ চন্দ্র ঘোষ (আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক), জহির রায়হান (চলচ্চিত্রকার),  মেহেরুন্নেসা (কবি), ড. আবুল কালাম আজাদ (গণিতজ্ঞ), নজমুল হক সরকার (আইনজীবী), নূতন চন্দ্র সিংহ (আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)।

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে রূপদানের হীন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ডিসেম্বরের ৩ তারিখে ভারতে বিমান হামলা করার ভারত প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পর্যদুস্ত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণের দলিল সই করে, যা ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। এরই মাধ্যমে নয় মাসব্যাপি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিলো ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমরাষ্ট্র পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয়।

প্রতি বছর ২৫ মার্চে আমরা প্রয়াত সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করলেও স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও সেইসব ঘাতক দালালদের উপযুক্ত বিচার করতে পারিনি। মানব জাতির মর্যাদা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সকলেরই বিচার হওয়া উচিত। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং জনগণের দৃঢ়অঙ্গিকার। ঘাতক দালাল চক্র এদেশের আনাচে-কানাচে এখনও সক্রিয় এবং তারা স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির পথ রুগ্ধ করে রাখার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বিনা অপরাধে এদেশের স্বাধীনতাকামী লক্ষ লক্ষ মানুষ ও বুদ্ধিজীবীরা পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন এসব ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা এবং সাক্ষ্য প্রমাণ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশপ্রেমিক প্রজম্মের সামনে উপস্থাপন হওয়া আবশ্যক।

লেখক: সাবেক মহাপরিচালক জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি - dainik shiksha আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032138824462891