২৬ লাখ বেকার কোন পথে? - দৈনিকশিক্ষা

২৬ লাখ বেকার কোন পথে?

মুহাম্মদ শরীফ |

আধুনিক রাষ্ট্রে বেকারত্ব একটি বড় অভিশাপ। কেবল অনুন্নত বা উন্নয়নশীল নয়, উন্নত রাষ্ট্রেও বেকারত্বের সন্ধান মিলে। তবে এটা বলা যায়, একটা দেশ যতটা উন্নত সেখানে বেকারত্ব ততটা কম। তাই বেকারত্বও অনেক সময় হয়ে ওঠে উন্নত রাষ্ট্র চিহ্নের মাপকাঠি। অর্থনীতির বিচারে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। সে ক্রমশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবার পথে চলমান। কিন্তু এই চলায় কতটা অগ্রগতি হচ্ছে, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। মাপকাঠি যদি বেকারত্বের দিক হতে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে সেই অগ্রসরের চিত্রটা যে সুখের নয়; তা সহজেই অনুমান করা যায়।

শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৫-১৬) দিকে তাকালে ব্যাপারটা আরো সামনে আসে। আমাদের দেশে এখন প্রায় ২৬ লাখ বেকার। যারা বসে আছে, শ্রম দিতে প্রস্তুত; কিন্তু পারছে না। দুঃখের বিষয় হলো, এই বেকারদের অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষিত। যারা উচ্চ শ্রেণি হতে ডিগ্রি নিয়ে বছরের পর বছর উপযুক্ত কাজের আশায় বসে আছে, কিন্তু সেটা পাচ্ছে না। উপরোক্ত জরিপে একটি মজার বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, একেবারে লেখাপড়া জানেন না এমন ব্যক্তিরাই সবচেয়ে কম বেকার! তা ২.২ শতাংশ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণীরা বেকার ১০.১ শতাংশ। আর এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ ৩ লাখ ১৫ হাজার বেকার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যেন বেকার তৈরির কারখানা! এমনটা নয় যে, আমাদের দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান নেই। কর্মসংস্থান অবশ্যই আছে, কিন্তু যোগ্য প্রার্থী নেই।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে উচ্চ শিক্ষিতরা বেকার কেন? হ্যাঁ, প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিকই বটে। আমাদের দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মসংস্থানের একটা অংশ বিদেশিদের দখলে। বিশেষ করে ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কানদের হাতে। প্রতি বছরই এর প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর অর্থের একটা বড় অংশ এই খাত দিয়ে চলে যাচ্ছে  বাইরে। কিন্তু কথা হলো, দেশে যথেষ্ট শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকতে কেন বিদেশিরা এই খাতে আসছে। এর কারণ খুঁজতে আমাদের মূলে যেতে হবে। কারণটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই এ দেশের তরুণদের বেকার হিসেবে তৈরি করছে। ব্যাপারটা অবাক করার মতো হলেও, চরম সত্যি। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন দিল্লির লাড্ডু- যে খাবে সে পস্তাবে, যে না খাবে সেও পস্তাবে! আমাদের দেশের একজন উচ্চ শিক্ষিত তরুণ কর্মসংস্থানে প্রবেশ করলে, সেখানে তাকে আবার প্রথম থেকে শিক্ষা লাভ করতে হয়। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার কোনো কাজে আসে না। ফলে, সেখানেও তাকে থাকতে হয় একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই। আর এখানে এসেই বিপদে পড়ে কর্মদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ। সেখানে তারা একজন তৈরি করা কর্মী খোঁজে, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী নয়। আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে কর্মী হিসেবে গড়ে দিতে পারে না বিধায়, বিদেশ থেকে এ দেশে এখনো কর্মী আমদানি করতে হচ্ছে। ব্যাপারটা যে কর্মদাতা সংগঠনগুলো বাধ্য হয়েই করছে, বুঝা যায়। এতে কর্মসংস্থানের কোনো দোষ পড়ে না। ভাগ্যিস, আমাদের দেশের কৃষক, জেলেদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিতে হয় না। তা না হলে তো আমাদের না খেয়েই মরতে হতো! দেশে ২৬ লাখ বেকার। সংবাদটা আতঙ্কের। বেকারত্বের জন্য তরুণদের অবশ্যই দায় দেওয়া যায় না। এ দায় সরকারের। আর সরকারকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তৈরি করে দিতে হবে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান।

বেকারত্ব জীবনের বড় একটি অভিশাপ। বেকার তরুণরা প্রায়ই বিষণ্নতায় ভোগেন। এই অভিশাপ একজন তরুণকে সহজেই বিপথে নিয়ে যায়। সহজেই করে ফেলে বিপথগামী। বর্তমান বেকারদের সহযোগিতা করে, বন্ধ করতে হবে ভবিষ্যতের বেকার তৈরির প্রক্রিয়া। শিক্ষাখাতে আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতরা যেন বেকার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় হতে বের না হয়, তৈরি করতে হবে সে পথ। কর্মের অভিজ্ঞতা যেন একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই পায়, প্রবর্তন করতে হবে সেরকম শিক্ষা নীতি। তবেই শিক্ষিত তরুণরা অভিশাপ না হয়ে, রূপান্তরিত হবে সম্পদে। আর তখনই আমরা পৌঁছতে পারব উন্নত রাষ্ট্রের দরজায়।

লেখক :শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,

ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা

সৌজন্যে: দৈনিক ইত্তেফাক

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043931007385254