নূন্যতম ২৭ হাজার টাকা বেতন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। একইসঙ্গে কোটা বহাল থাকা রাজস্ব খাতভুক্ত পদগুলোতে নিয়োগে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটা সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তারা। আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বর্তমান বেতনের ২০ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা, নবম পে কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। আসন্ন বাজেটে এসব দাবি দাওয়া পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কর্মচারী নেতারা। এসব দাবি বাস্তাবায়নে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন কর্মচারী নেতারা। দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টাস্ ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানায় বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি মো. মানিক মৃধা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ভেঙে ১০ ধাপে বেতন নির্ধারণ করে নবম বেতন কমিশন গঠন ও ১ অনুপাত ৫ হারে বেতন বিন্যাস করে ছয় সদস্যের একটি পরিবারের জন্য জনপ্রতি দৈনিক ১৫০ টাকা হারে সর্বনিম্ন ২৭ হাজার টাকা মূল বেতন নির্ধারণের দাবি জানান। একইসঙ্গে পেনশন গ্রাচ্যুইটির হার ১ টাকায় ৫০০ টাকা দেয়ার দাবি জানান।
চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির অন্যান্য দাবিগুলো হলো, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া, ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত রেশনের ব্যবস্থা করা, মূল বেতনের ২০ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া, নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের পোষ্য কোটা সংরক্ষণ এবং উচ্চ শিক্ষিত চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের সরাসরি পরবর্তীস্তরে পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ।
দাবি দাওয়ার মধ্যে আরও আছে, কর্মচারীদের গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সাজ পোষাক ভাতা, ধোলাই ভাতার মত বেতনের সাথে দেয়া, আউটসোর্সিং, কন্টিনজেন্সিপেইড, মাস্টাররোল, ক্যাজুয়াল, কাজ ও ভাউচারভিত্তিক নিয়োগ করা কর্মচারীদের নিয়মিত করা এবং সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। একইসঙ্গে ঢাকাসহ সারাদেশে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনে বিনাসুদে সহজ শর্তে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়া।
নূন্যতম ২৭ হাজার টাকা বেতনের দাবি নিয়ে কর্মচারী নেতারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতিতে সরকারি কর্মচারীদের পরিবার নিয়ে জীবন ধারণ করা কষ্ট করে হয়ে গিয়েছে। সমিতির ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর দুইবার সব কিছুর দাম বাড়ে। পবিত্র রমজানে আর বাজেটে। কিন্তু কর্মচারীদের বেতন বাড়ে না। আজকের দিনে ৮ হাজার টাকা বেতনে কিভাবে একজন চুতর্থ শ্রেণির কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন ধারণ করেন তা নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।
সব নিয়োগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ৪০ শতাংশ পোষ্যকোটা সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের অতিরিক্ত মহাসচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল সরকার বাতিল করলেও অন্যান্য পদগুলোতে কোটা বহাল আছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগেও কোটা আছে। যে পদগুলোতে নিয়োগে কোটা বহাল আছে সে পদগুলোতে আমরা ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণে দাবি জানাচ্ছি। এসময় বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবি জানান এ কর্মচারী নেতা।
উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, ঢাকা কলেজ ঐতিহ্যবাহী কলেজ। এ কলেজে সরকারি কর্মচারীদের ২০টি পদ আছে। আর বেসরকারি কর্মচারীদের পদ আছে ১৫০টির মত। সরকারি কর্মচারীদের পদগুলোর ১০টি খালি। কলেজের বেশিরভাগ কাজ করছেন বেসরকারি কর্মচারীরা। কিন্তু তাদের অবস্থা আমাদের থেকেও খারাপ। ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা বেতন পান তারা। তাই আমরা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতি বিভিন্ন সরকারি কলেজে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবি জানাচ্ছি।
সমিতির সভাপতি মো. মানিক মৃধা বলেন, দাবিগুলোর বিষয়ে কর্মচারীদের মনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ও হতাশা নিরসনে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না পেলে বা বাজেটে এর কোন দৃশ্যমান প্রতিফলন না থাকলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে ১ জুলাই থেকে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল আলম, কার্যকরী সভাপতি আবুল হোসেন আহমেদ বাবু, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা এম এ আউয়াল, সহ সভাপতি খন্দকার বাবুল, মো. শাহ আলম, মোফাজ্জল হোসেন, মো. মানিক মিয়া, কুতুব উদ্দিন সেলিম, মো. মোশারফ হোসেন, ফনি ভূষণ দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আওলাদ হোসেন, ঢাকা মহানগর সভাপতি কামাল হোসেন সিকদারসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা কর্মচারী নেতারা।