৩০ মিনিটে শিক্ষকদের অবসরের কাগজ রেডি - Dainikshiksha

৩০ মিনিটে শিক্ষকদের অবসরের কাগজ রেডি

মাসুদ আলম |

৭ মার্চ, ২০১৮। শিক্ষক এম এম ওয়াজেদ আলীর শিক্ষকজীবনের শেষ কর্মদিবস। হঠাৎ তাঁর মুঠোফোনটি বেজে ওঠে। কলটি তিনি ধরলেন। ওপারে কেশবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বললেন, কাল একটু আসেন। পরদিন সকালে ওই কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে অবাক ওয়াজেদ আলী। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। 

বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতে শুরু হলো তাঁর অবসরের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম তাঁর সামনেই সই করে দিলেন সব কাগজে। ৩০ মিনিটেই অবসর মঞ্জুরিপত্র হাতে পেলেন ওয়াজেদ আলী।দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক খবরে এ তথ্য জানা গেছে। 

যশোরের কেশবপুর উপজেলার আওয়ালগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন ওয়াজেদ আলী। গত এক বছরে তাঁর মতো জেলার ১১৩ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অবসরে গেছেন। সবাই অবসর মঞ্জুরিপত্র এবং অবসরোত্তর ছুটির আদেশ পেয়েছেন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই।

অবসর (পেনশন) এবং অবসরোত্তর ছুটির (পিআরএল) আদেশ ও মঞ্জুরিপত্রের জন্য এখন আর কোনো শিক্ষককে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে যেতে হয় না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে সব কাগজে সই করেন। এরপর তা তুলে দেওয়া হয় অবসরে যাওয়া শিক্ষকের হাতে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল আলম এ উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন।

শিক্ষক ওয়াজেদ আলীর বাড়ি থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রায় ৮ কিলোমিটার আর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। তিনি বলেন, ‘অবসরের পর এই দুই শিক্ষা অফিস ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হয়। ঘুষ দিতে হয়। এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু কোনো হয়রানি ছাড়াই মাত্র ৩০ মিনিটেই অবসর মঞ্জুরিপত্র হাতে পেয়েছি। এরপর তিন দিনের মধ্যে সব টাকাও উত্তোলন করেছি। এটা সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা।’

জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে চৌগাছা উপজেলার ভাদড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন সহকারী শিক্ষক আবদার রহমান। গত ৩০ ডিসেম্বর তাঁর অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হয়েছে। তিন দিন আগেই ২৭ ডিসেম্বর তিনি অবসরোত্তর ছুটির আদেশ হাতে পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কল্পনা করতে পারিনি, এত সহজে পেনশনের যাবতীয় কাগজপত্র পাব।’

শিক্ষকেরা বলছেন, অবসর এবং অবসরোত্তর ছুটির আদেশ ও মঞ্জুরিপত্রের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে শিক্ষকদের হয়রান হতে হতো। ঘুষ দিতে হতো। কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার একটি উদ্যোগ সবকিছু বদলে দিয়েছে। উদ্যোগটি অনন্য।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার হিংগারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর পিআরএল এবং এর এক বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যান। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। পিআরএলের আদেশের জন্য তাঁকে এক মাস এবং অবসর মঞ্জুরিপত্রের জন্য প্রায় ২০ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। দুই অফিসে প্রতিবার পাঁচ-ছয় দিন করে যেতে হয়েছে। মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য কিছু টাকাও দিতে হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি শেখ অহিদুল আলম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যশোরে যোগ দেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালে জেলার যেসব প্রাথমিক শিক্ষক অবসর ও অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন তাঁদের তালিকা তৈরি করেন। প্রতি দুই মাস অন্তর তিনি জেলার একটি করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর পরিদর্শন করেন। ওই দিন উপজেলার অবসর ও অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া শিক্ষকদের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। মাত্র ৩০ মিনিটেই শিক্ষকেরা অবসর ছুটির মঞ্জুরিপত্র এবং অবসরোত্তর ছুটির আদেশ পেয়ে যান।

২০১৮ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ১১৩ জন শিক্ষক অবসর ও অবসরোত্তর ছুটিতে গেছেন।

শেখ অহিদুল আলম বলেন, অবসরে যাওয়ার আগে ছুটি পাওনা সাপেক্ষে শিক্ষকেরা এক বছর অবসরোত্তর ছুটি ভোগ করেন। কিন্তু দাপ্তরিক বিভিন্ন নিয়মনীতি এবং কিছু মানুষের অসততা ও অনৈতিক আচরণের কারণে শিক্ষকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। পেনশনের টাকা পেতে তাঁদের অনেক বিলম্ব হয়। দীর্ঘ চাকরিজীবনের শেষে এসে মনঃকষ্টে ভোগেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

সূত্র: প্রথমআলো

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033798217773438