৩৯৮ সরকারি প্রাইমারি স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ - Dainikshiksha

৩৯৮ সরকারি প্রাইমারি স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি |

জেলায় এক হাজার ২২৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৯৮ বিদ্যালয় ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিনেও এসব ভবন সংস্কার কিংবা মেরামত করা হয়নি। ফলে জেলার ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এসব বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে কয়েকটি বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরেও অধিকাংশ বিদ্যালয় ভবনে ঝুঁকি রয়েই গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৬ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ছাদের বিম ধসে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত হয়। ঘটনাটি সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অন্যান্য জেলার ন্যায় পটুয়াখালী জেলার ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের তালিকা তৈরির নিদের্শনা দেয়া হয়। তালিকানুযায়ী জেলায় মোট এক হাজার ২২৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সকল বিদ্যালয়ে মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ২১৭ শিশু শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এরমধ্যে জেলায় মোট ৩৯৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন তদন্তের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের এ তালিকা তৈরি করেন।

তালিকানুযায়ী সদর উপজেলায় ২০৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১ বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। একইভাবে কলাপাড়া উপজেলায় ১৭১টির মধ্যে ৬২, গলাচিপায় ১৯১টির মধ্যে ২৮, দশমিনায় ১৪৫টির মধ্যে ৫৩, বাউফলে ২৩৯টির মধ্যে ৮২, মির্জাগঞ্জে ১৪২টির মধ্যে ৪৮, দুমকিতে ৫৮টির মধ্যে ২৩ ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৭১টির মধ্যে ২১ বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে-এসব ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এরমধ্যে কোনো কোনো বিদ্যালয় ভবন এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, কর্তৃপক্ষকে বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান করতে হচ্ছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম সগির এ বিষয়ে জানান, তার উপজেলায় ২১ ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনে অন্তত ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এরমধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিকল্প ব্যবস্থায় অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী টিনের ঘরে ক্লাস নিতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ভবনের যে কক্ষ মোটামুটি কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে, তাতেও ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তবে আশার কথা, রাঙ্গাবালী উপজেলায় বর্তমানে সাতটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলোর নির্মাণ সম্পন্ন হলে সঙ্কট অনেকটাই মিটবে বলেও মনে করেন তিনি।
 
এদিকে, সরেজমিনে গিয়ে একাধিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের করুণ দশা। সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের ১৬০ নম্বর ভায়লা দেওয়ানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষকরাই শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করছেন। একজন শিক্ষক বলেন, প্রতিদিনই স্কুল ভবনের ছাদের বিম থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে। সকালে এসে পরিষ্কার করে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নাঈম হোসেন জানায়, স্কুলে ছাদ থেকে ময়লা খসে পড়ায় তারা আতঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করছে। সব সময় তাদের দৃষ্টি থাকে ওপরে ছাদের দিকে। কারণ কখন পলেস্তরা খসে পড়ে।

স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু মেয়ে বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্ক কাটে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের স্কুল ভবন নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তী ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ নবেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময়ে সংস্কারের জন্য যা বরাদ্দ পেয়েছেন, তা দিয়ে মেরামত করে কোনোমতে পাঠদান সচল রাখা হচ্ছে। তবে এভাবে আর রাখতে পারা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, স্কুল ভবনের কাছাকাছি কোনো বড় ধরনের গাছ নেই। তাই রোদের মধ্যে বাইরে পাঠদান করা যাচ্ছে না। আবার কাছাকাছি কোনো বাড়িঘর নেই যে বৃষ্টি নামলে ছাত্রছাত্রীদের সেখানে নিরাপদে নেয়া যায়। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করাচ্ছেন। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে জানানও হয়েছে বলে তিনি জানান। আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ে একই চিত্র দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা যথাসময়ে বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে অনুলিপিও দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010991096496582