বিসিএসের মাধ্যমে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগে আগের নিয়ম থেকে সরে এসে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ৪০তম বিসিএস থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গত ২৩ আগস্ট চিঠি দিয়েছে পিএসসি। তবে এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন, এতে একেকটি বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে প্রার্থীদের নিয়োগ কমে যাবে।
পিএসসি সূত্র জানায়, গত কয়েকটি বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ক্যাডার পদে নিয়োগের পর উত্তীর্ণ বাকি প্রার্থীদের নন-ক্যাডার হিসেবে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হচ্ছিল। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা পিএসসিতে পাঠানোর অনুরোধ করা হতো। সেখান থেকে পাঠানো পদের চাহিদা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো। নতুন আরেকটি বিসিএসের ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত শূন্য পদের চাহিদা এলে পিএসসি অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ করত।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। তবে চলমান ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ক্ষেত্রে কোন বিসিএসের সময় কোন শূন্য পদের চাহিদা এসেছে, তা পর্যালোচনা করে মেধার ভিত্তিতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।
চিঠির তথ্য অনুযায়ী, পিএসসিতে এখন নবম, দশম ও এগারোতম গ্রেডে নিয়োগের জন্য মোট ১ হাজার ২০৭টি শূন্য পদের তালিকা জমা পড়েছে।
জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, চলমান সর্বশেষ চার বিসিএসের কোনটিতে কত নন-ক্যাডার পদ বরাদ্দ থাকবে, তা আগেই নির্দিষ্ট করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের ক্ষতি হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে বেশি প্রার্থী নিয়োগ পেলেন, আরেকটিতে কম—এমন ভারসাম্যহীনতা দূর করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে ২৯তম বিসিএস থেকে নিয়োগ দিয়ে আসছে পিএসসি। সর্বশেষ পাঁচটি বিসিএসের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ৩৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে অপেক্ষমাণ ৬ হাজার ৫৮৪ প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৮০২, ৩৫তম বিসিএসে ৩ হাজার ৩৫৯ প্রার্থীর মধ্যে ২ হাজার ১৪৪, ৩৬তম বিসিএসে ৩ হাজার ৩০৮ প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২৬১, ৩৭তম বিসিএসে ৩ হাজার ৪৫৪ প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৭২৪ এবং ৩৮তম বিসিএসে ৬ হাজার ১৭৩ প্রার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৩০২ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, বিগত বিসিএসগুলোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশের জন্য পিএসসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে শূন্য পদের তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়। ইতিমধ্যে পিএসসিতে শূন্য পদের তালিকা এসেছে, যা প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু এসব পদ এখন ৪০তম বিসিএসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।
পিএসসির নতুন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, আগের বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে অন্যরা যে সুবিধা পেয়েছেন, তাঁরা সেটি পাচ্ছেন না।