৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র একজন - দৈনিকশিক্ষা

যশোর সরকারি এমএম কলেজ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র একজন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপীঠ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ। এ কলেজের তিনটি বিভাগে শিক্ষক সংকট তীব্র রূপ ধারণ করেছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এর মধ্যে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু শিক্ষক নয়, এ কলেজে শ্রেণীকক্ষ সংকটও প্রকট। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যশোর সরকারি এমএম কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সামনে প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছেন। বিভাগের শিক্ষকদের কক্ষের দরজায় তালা ঝুলছে।

ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিভাগের একমাত্র শিক্ষক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। এজন্য শিক্ষকদের কক্ষে বসার মতো কেউ না থাকায় তালা লাগানো হয়েছে।

শারমিন আকতার নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের (গতকাল) তিনটি ক্লাস হওয়ার কথা। এসে শুনলাম, একটি ক্লাসও হবে না। আরেক শিক্ষার্থী রেখা খাতুন বলেন, প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে দুই মাস হলো। এর মধ্যে সব মিলিয়ে আমাদের পাঁচ-ছয়টি ক্লাস হয়েছে। এজন্য এখন আর কেউ কলেজে তেমন আসে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শুধু ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ নয়, মার্কেটিং এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেরও প্রায় একই চিত্র। এর মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুজন শিক্ষক আছেন। ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ১২ শিক্ষকের পদের বিপরীতে আছেন সাতজন।

এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয় আবশ্যক করা হলেও শিক্ষকের কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এ কারণে অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে এ বিষয়ের পাঠদান করা হয়।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে কর্মরত একমাত্র শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. শাহেদ হোসেন বলেন, এ বিভাগে শিক্ষকের পদ রয়েছে দুটি। দুজনই ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি প্রভাষক মোহাইমিনুল হককে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

যে কারণে আমিই এখন গোটা বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত টানা পাঠদান করতে হয়। এতে বেশ কষ্ট হয়ে যায়।

মার্কেটিং বিভাগ সূত্রে জানা গেল, প্রভাষক পদে কর্মরত রমজান আলী এ বিভাগে নিয়োগ পাওয়া একমাত্র শিক্ষক। সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত মো. শাহিদুজ্জামানকে প্রেষণে এখানে পাঠানো হয়েছে। সূচি অনুযায়ী এ বিভাগে সপ্তাহে ৫১টি পাঠদান করার কথা। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে অর্ধেক পাঠদানও হচ্ছে না।

এ বিভাগের শিক্ষার্থী রুমা সরকার বলেন, কলেজে এখন তেমন একটা ক্লাস হয় না। যে কারণে আমরা মাঝে মাঝে আসি।

মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহিদুজ্জামান বলেন, স্নাতক কোর্সে ন্যূনতম সাতজন ও স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য ন্যূনতম ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ চালুর সময় থেকেই দুটি করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিভাগ দুটি চালু করা হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও নতুন কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

এ বিষয়ে যশোর সরকারি এমএম কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু তালেব মিয়া বলেন, কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, মার্কেটিং এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ এবং উচ্চ মাধ্যমিকের আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকের তীব্র সংকটের কথা জানিয়ে প্রতি মাসেই শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায় না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে একটি জরিপ করে দেখা হয় সারা দেশের বিভিন্ন কলেজে ১২ হাজার ৫০০ শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

এরপর সমন্বিতভাবে পদ সৃষ্টির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আবার জনপ্রশাসন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু পাঁচ বছরে এর কোনো সমাধান আমরা করতে পারিনি। বিচ্ছিন্নভাবে পদ সৃষ্টিও করা যাচ্ছে না। এ কারণে বিষয়টি আটকে রয়েছে। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা-ও ঠিক বলা যাচ্ছে না।

যশোর সরকারি এমএম কলেজের কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এ কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ১৯টি বিভাগ ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী মিলিয়ে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

এসব শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য ১৬১টি পদ থাকলেও শিক্ষক আছেন ১৪১ জন। পাঠদানের জন্য রয়েছে ৫১টি শ্রেণী কক্ষ। সারা বছরই কোনো না কোনো বিভাগের পরীক্ষা থাকে। এ কারণে প্রায়ই সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আবু তালেব মিয়া বলেন, ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর এ কলেজে পাঠদানের জন্য কমপক্ষে ৮১টি শ্রেণীকক্ষ দরকার। কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র ৫১টি। এ কারণে সব ধরনের পরীক্ষা এখন দুপুরের পর নেয়া হচ্ছে। তার পরও একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এমএম কলেজের অধ্যক্ষের পাঠানো চিঠিটি প্রস্তাবনা আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046319961547852