কপাল খুলছে দেশের শিক্ষিত বেকারদের। চলতি বছর সরকারি চাকরিতে ৭০ হাজার পদে জনবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের তিন লাখ শূন্যপদের বিপরীতে এই জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর ও পরিদফতরে নিয়োগের হিড়িক লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এই নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে দেশের সব বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
একাধিক সরকারি সূত্র দৈনিকশিক্ষাকে জানিয়েছেন, শূন্যপদ পূরণে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে চাপ থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই সরকার কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশেষ নজর দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর এই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চলতি বছর সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পাবে পুলিশে, যা প্রায় ২০ হাজার। এরপরই রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি খাত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে নিয়োগ পাবে প্রায় ১৫ হাজার জনবল। সরকারি চাকরির আরেক বড় খাত স্বাস্থ্য। এই খাতে প্রায় ১২ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে, যার মধ্যে পাঁচ হাজার নার্স রয়েছে। বিসিএসের মাধ্যমে এ বছরের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় চার হাজার জনবল। এছাড়া সরকারের প্রাথমিক গণশিক্ষা, অর্থ, আইন, কৃষি, খাদ্য, প্রতিরক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদফতর ও সংস্থাগুলোতে আরও প্রায় ২৩ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এসব নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে, শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণ করতে হবে। সেজন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো শূন্যপদ পূরণের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে সব শূন্যপদ একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ কোটা পূরণ করতে হয়। এছাড়া পর্যায়ক্রমে লোক নিয়োগ হচ্ছে ও পদও খালি হচ্ছে, অনেকেই অবসরে যাচ্ছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ রয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৯০৪টি। সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী, নবম গ্রেডে (প্রথম শ্রেণির) ৩৯ হাজার ৫৬৪টি, ১০-১২ গ্রেডের (দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩০ হাজার ৪২২টি, ১৩-১৭ গ্রেডের (তৃতীয় শ্রেণির) ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪১৭টি এবং ১৮-২০ গ্রেডের (চতুর্থ শ্রেণি) ৬৯ হাজার ৫০১টি শূন্যপদ আছে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নবম ও ১০-১২ গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়া ১৩-২০তম গ্রেড (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) পদে নিজ নিজ দফতর ও সংস্থার নিয়োগবিধি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দফতর জনবল নিয়োগ দেয়। সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি’ (বিএসসি)। চলতি বছর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগ দেবে বিএসসি।
পুলিশে ২০ হাজার নিয়োগ
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে ১০ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পদে আরও তিন হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে আরও ১০ হাজার এবং ডিসেম্বরে আরও ১০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদ সৃষ্টির কাজ করছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদ সৃষ্টি করার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের আরও ৩৭ হাজার পদ সৃষ্টির কাজ চলছে। তার মধ্যে ১০ হাজার পদ সৃষ্টির কাজ প্রায় শেষের দিকে। আরও ১০ হাজার পদ সৃষ্টির অনেকটা এগিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী মাসের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।