৭ বছর ধরে অজানা রোগে দূর্বীসহ জীবন-যাপন মাসুদ রানার

৭ বছর ধরে অজানা রোগে দূর্বীসহ জীবন-যাপন মাসুদ রানার

নওগাঁর টকবগে তরুন শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পিতার অসুস্থতার কারনে যে কিনা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংসার চালানোর দায়িত্ব। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস' সেই মাসুদ রানা-ই দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে একটি হুইল চেয়ারে ও বিছানায় করছে দূর্বীসহ জীবন-যাপন। ইতোমধ্যেই তার পিতা সুস্থ্যতা লাভ করলেও ছেলের এমন অবস্থা দেখে ও অর্থ

নওগাঁর টকবগে তরুন শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পিতার অসুস্থতার কারনে যে কিনা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংসার চালানোর দায়িত্ব। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস' সেই মাসুদ রানা-ই দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে একটি হুইল চেয়ারে ও বিছানায় করছে দূর্বীসহ জীবন-যাপন। ইতোমধ্যেই তার পিতা সুস্থ্যতা লাভ করলেও ছেলের এমন অবস্থা দেখে ও অর্থ অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে মাসুদ রানার পিতা হয়ে পড়েছেন প্রায় বাকরুদ্ধ।

সরকারি বা কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যদি চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেন তাহলে যুবক মাসুদ রানা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন বলেই স্থানীয়দের ধারণা।

 

অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইল চেয়ারে দূর্বীসহ জীবন-যাপনকারী মাসুদ রানা হলেন, নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের চকবিষ্ণপুর বেলপুকুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। মাসুদ রানার বয়স যখন ১৫ বছর সে তখন ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সেই সময়ই মাসুদ রানার বাবা আব্দুর রহিম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা আব্দুর রহিম পা ভেঙে বিছানায় পড়ে থাকার কারনে সে সময় বাবার চিকিৎসা খরচ ও সংসার চালানোর কারনে অর্থ সম্বলহীন পরিবারের সন্তান মাসুদ রানা লেখাপড়া বন্ধ করে বাবার হাঁড়িপাতিলের ব্যবসায় নামেন।

৭ বছর ধরে অজানা রোগে দূর্বীসহ জীবন-যাপন মাসুদ রানার

বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে কাঁধে তুলেনেন হাড়ি-পাতিলের ভাঁড়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরিওয়ালা হিসেবে কাঁধে ভার নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম। এভাবেই সারা দিনে যা আয় করেছেন তা দিয়ে নিজের খরচ ও সংসারের খরচ মিটিয়ে বাবা আব্দুর রহিমের চিকিৎসার খরচ বহন করেছেন মাসুদ। এভাবে চলতে থাকে প্রায় ৫ বছর। এর মাঝে তার বাবা সুস্থ হয়ে উঠলেন। বাবাকে যেন কষ্ট করে আর এই হাঁড়িপাতিলের ব্যবসা করতে না হয় সে জন্য স্থানীয় চকবিষ্ণপুর বাজারে ছোট্ট একটি ফলের দোকান দিয়ে আয় করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ছেলে মাসুদ রানা। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বাবা সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পরই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ছেলে মাসুদ রানা। ভুগতে থাকেন নাম না জানা এক অজানা রোগে। বন্ধ হয়ে যায় তার হাঁড়িপাতিলের ব্যবসা সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় তার রোজগার।

এমন পরিস্থিতিতে ছেলে মাসুদ রানাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে তার পরিবার। দিনের পর দিন ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায় বাবা আব্দুর রহিমের একমাত্র আয়ের উৎস ফলের দোকানটিও। ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছুটতে থাকেন দেশের নামি দামি হাসপাতালগুলোতে। কয়েকবার উন্নত চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা করেও কোনো রোগ ধরা পড়েনি। ধীরে ধীরে একজন তরতাজা তরুণ যুবক বলহীন হতে থাকে। ছেলে মাসুদ রানার আসলে কি রোগ হয়েছে? কেন সে প্রতিবন্ধীর হযে পড়ছে? এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে একটানা ৭বছর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের শরণাপন্ন হন মাসুদ রানার দরিদ্র পরিবার। কিন্তু কোনো রোগ ধরা পড়েনি, মিলেনি কোনো প্রতিকার। 

মাসুদের চলাফেরার একমাত্র ভরসা এখন সেই ছোট্ট একটি হুইলচেয়ার। সেটিও ইতিমধ্যেই ঠেলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে মাসুদ। এখন ডান পায়ে সে কিছু শক্তি পেলেও বাম পা পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিলে হয়তো সুস্থ হয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে মাসুদ রানা এমনটাই ধারণা করছে তার পরিবার সহ প্রতিবেশীরা। কিন্তু দরিদ্র বাবা আব্দুর রহিমের অভাবী সংসারে ছেলেকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া অসম্ভব বলেই মাসুদ রানা এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় এখন দিনক্ষণ গুনছেন বললেই চলে।

মাসুদ রানার বাবা আব্দুর রহিম দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আর কত দিন এভাবে জীবনের সাথে লড়াই করে তাকে (মাসুদ রানা) বেঁচে থাকতে হবে? আমি গরিব মানুষ দেশের কোন মানুষ যদি একটু চিকিৎসা সহায়তা করে আমার ছেলেকে সহযোগীতা করত তাহলে আমার ছেলেটি ভালো সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে। ছেলে মাসুদ রানার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি, বেসরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সহযোগিতা চেয়েছেন তার বাবা আব্দুর রহিম।