৯ শতাংশ প্রার্থী ‘স্বশিক্ষিত’ অর্থ বোঝা দায় - Dainikshiksha

৯ শতাংশ প্রার্থী ‘স্বশিক্ষিত’ অর্থ বোঝা দায়

শরীফুল আলম সুমন |

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এই উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীদের মধ্যে শুধু স্নাতকই নয়, স্নাতকোত্তর এমনকি পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীও আছেন। অনেক প্রার্থী আবার দেশের বাইরেও অধ্যয়ন করেছেন। তবে একই সঙ্গে আছেন ‘স্বশিক্ষিত’ প্রার্থীও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো দলেও আছেন এই স্বশিক্ষিত প্রার্থী। কিন্তু এই ‘স্বশিক্ষিত’ বলতে প্রার্থীরা কী বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে একেকজনের একেক মত। আবার এসএসসির নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতা যেসব প্রার্থীর তারাও অবলীলায় তা উল্লেখ করেছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করা হলফনামায়।

ইসি সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৮৪১। তবে ইসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হলফনামা থেকে এক হাজার ৭১৮ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এক হাজার ৭১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৯০, যা মোট প্রার্থীর ৬৩.৪৪ শতাংশ। তবে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স ও পিএইচডি) সম্পন্ন করা প্রার্থী ৫২৭ জন, যা গড় হিসাবে ৩০.৬৭ শতাংশ। আর স্নাতক সম্পন্ন করা অর্থাৎ বিএ অনার্স, বিএ, বিকম, বিএসসি, এলএলবি, এমবিবিএস, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা ৫৬৩, মোট প্রার্থীর ৩২.৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করা প্রার্থীর সংখ্যা ৩২৩, যা গড় হিসাবে ১৮.৮০ শতাংশ। এসএসসির নিচে আছেন ৭৭ জন, যা মোট প্রার্থীর ৪.৪৮ শতাংশ। বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা ও কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা হাফেজ, ফিকাহ, তাকমিল ফিল হাদিস, ইফতা, মুফতি, মাওলানা সার্টিফিকেটধারী প্রার্থী ৬২ জন, যা গড়ে ৩.৬৩ শতাংশ। আর হলফনামায় ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন ১৬৩ জন। এই সংখ্যা মোট প্রার্থীর ৯.৪৮ শতাংশ।

তবে ‘স্বশিক্ষিত’ বলতে কী বোঝায় তা নিয়ে স্পষ্ট মত পাওয়া দুরূহ। কারণ অনেকেই বলছে, যাঁদের দাখিল করার মতো সার্টিফিকেট নেই তাঁরাই স্বশিক্ষিত লিখেছেন। আবার কেউ কেউ বলে, অনেকেরই উল্লেখ করার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা স্বশিক্ষিত লিখেছেন। কারণ তাঁদের অনেকেই সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে চান না। আবার কেউ কেউ সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘যাঁরা কোনো (স্তর) পাস করেননি বা পড়ালেখা করেননি তাঁরা তা এড়ানোর জন্যই স্বশিক্ষিত লিখে থাকতে পারেন বলে আমার মনে হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। অনেকেই আবার হলফনামাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এটা লিখে থাকতে পারেন। যদি পাস না করে স্বশিক্ষিত লিখেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যদি হলফনামাকে তুচ্ছ করে লিখেন সেটা কিন্তু মোটেই ভালো নয়।’

সুজন সম্পাদক আরো বলেন, ‘একজন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা অবশ্যই ভালো। তবে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা নেই বলেই যে সে যোগ্য নয়, এটাও ঠিক নয়। অতীতে দেখা গেছে, কম শিক্ষিত হয়েও অনেক সদস্য সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আবার বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষার যে মান তাতে অনেকেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর হয়েও তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘যাঁরা স্কুলেও পড়েন নাই, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই তাঁরাই সাধারণত স্বশিক্ষিত লিখে থাকেন। আসলে তাঁদের লেখার কিছু নেই। তবে একটা সময় ছিল যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ভাবা হতো না, কিন্তু বর্তমান যুগে তা কল্পনা করা যায় না। কারণ সংসদ সদস্যরা আইন প্রণেতা, তাঁদের দেশ-বিদেশের আইন সম্বন্ধেও জ্ঞান রাখতে হবে। কিন্তু সেটা যদি তাঁরা না রাখতে পারেন, তাহলে তাঁদের কাছ থেকে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে না।’

একজন রাজনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক বামপন্থী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একসময় যাঁরা প্রগতিশীল রাজনীতি করতেন তাঁদের অনেকের পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করার সুযোগ মিলত না। তা সত্ত্বেও তাঁরা আত্মগোপনে থেকে এমনকি কারাগারে থেকেও পড়াশোনা করে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতেন। ওই রাজনীতিকরা নিজেদের স্বশিক্ষিত হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ লেখালেখিও করতেন। তবে সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে অনেকটাই।

হলফনামা থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উজির ফকির নামের একজন, যিনি শিক্ষাগত যোগ্যতায় লিখেছেন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। সিলেট-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখেছেন স্বশিক্ষিত, তবে পেশায় লিখেছেন জমিদারি। আবার একই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। সিলেট-২ আসনে দুজন প্রার্থী স্বশিক্ষিত। তাঁরা হলেন গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং ইসলামী আন্দোলনের মো. আমির উদ্দিন। সিলেট-৪ আসনে জাতীয় পার্টির তাজর রহমান স্বশিক্ষিত। আবার সিলেট-৫ আসনে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী স্বশিক্ষিত হলেও পেশায় তিনি মাদরাসা শিক্ষক। একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুল মুনির চৌধুরী স্বশিক্ষিত। সিলেট-৬ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আজমল হোসেনও স্বশিক্ষিত।

হলফনামা থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী আমান উল্লাহ আমান স্বশিক্ষিত। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মুহিবুল হক আজাদ, জাকের পার্টির শাহ জাহান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ শাহ মুবশ্বির স্বশিক্ষিত। এই আসনের বাকি তিন প্রার্থীই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। সুনামগঞ্জ-৪ আসনেও দুজন প্রার্থী স্বশিক্ষিত। চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. ইসহাক চৌধুরী শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে লিখেছেন স্বশিক্ষিত, তাঁর পেশা ব্যবসা। একই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. সামছুল আলমও স্বশিক্ষিত। চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনএফের প্রার্থী আতিউল্লাহ ওয়াসিম সমাজসেবী ও স্বশিক্ষিত। একই আসনে বাসদের প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিনও স্বশিক্ষিত। তবে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আবদুল নবী শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন চতুর্থ শ্রেণি। এ ছাড়া টাঙ্গাইল-৩ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী খলিলুর রহমান এবং টাঙ্গাইল-৪ আসনে ইসলামী আন্দোলনের মির্জা আবু সাঈদ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। পিরোজপুর-৩ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী আবদুল লতিফ সিরাজী শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ না করলেও তিনি পেশায় শিক্ষক। পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শামীম সাঈদী স্বশিক্ষিত। ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জীবা আমিনা খানও স্বশিক্ষিত। ময়মনসিংহ-৩ আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত স্বশিক্ষিত। নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মানু মজুমদারও শিক্ষাগত যোগ্যতায় লিখেছেন স্বশিক্ষিত। নেত্রকোনা-২ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী সজীব সরকার রতনও স্বশিক্ষিত।

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065510272979736