তিনি আর কেউ নন। জেলা শহরের একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ। ঘুরে বেড়ান সরকারি গাড়িতে। আগেপিছে থাকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা। বহাল তবিয়তে সময় কাটান, মউজ-মাস্তি করেন তারকা হোটেলে। প্রশাসনের যোগশাসজশে দেখাচ্ছেন দাপট। অধিদপ্তর আর মন্ত্রণালয় যেন তার অলিখিত দপ্তর। দিনের পর দিন কাটছে এই অধ্যক্ষের এভাবেই। নিজ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরেই কাটছে এই অধ্যক্ষের বেশি সময়। বদলি আর ওএসডির দণ্ডমুণ্ডের নেপথ্যের কারিগর নাকি ঐ অধ্যক্ষই। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সেই অধ্যক্ষের নানা অজানা তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বাইরের একটি অখ্যাত বেসরকারি কলেজের ব্যাচেলর এই অধ্যক্ষের সার্বক্ষণিক সেবায় ব্যস্ত-সমস্ত দিন কাটিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তা। হরহামেশাই বেসরকারি শিক্ষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। কিন্তু তারাই গত ২৬ ও ২৭ জুন এই বেসরকারি অধ্যক্ষকে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়েছেন। অখ্যাত এই বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দুই মাস আগে তার নিজ ফেসবুকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছিলেন। এমন একজন বেসরকারি অধ্যক্ষের সার্বক্ষণিক সেবায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োজিত থাকার ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরের খুব কাছে একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিসে কর্মরত একজন কর্মকর্তার উদ্যোগে এই সেবা দেয়া হয়েছে। সরকারি গাড়ি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের দুইজন কর্মকর্তা রাজধানীর দিলকুশার তারকাখচিত হোটেল পূর্বাণীতে গেছেন পরপর দু’দিন। গাড়ির দরজা খুলে অপেক্ষা করেছেন বেসরকারি অধ্যক্ষ মহোদয়ের জন্য। এরপর শাপলা চত্বরের পাশের সেই অফিসটিতে পৌঁছালে অতি আন্তরিকতার সঙ্গে অধ্যক্ষ মহোদয়কে গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক আগলে রাখা হয়। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে, পূর্বাণী হোটেলের ভাড়া কোন খাত থেকে দেয়া হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।
জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারির আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কিংবা শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্যের কাছে আলোচিত বেসরকারি অধ্যক্ষ মহোদয়ের কানাকড়িও দাম ছিল না। শিক্ষাজীবনে তিনি মুজিববাদী ছাত্রলীগারদের দাবড়ানি দিতেন, কষে গালমন্দ করতে সভা-সমাবেশ-মিছিলে। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনে হঠাৎ ক্ষমতাবান হিসেবে নাজিল হওয়া এই অধ্যক্ষই সাম্প্রতিক বদলি-ওএসডিকাণ্ডের হোতা হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে চিহ্নিত হয়েছেন। এই অধ্যক্ষের নেক নজরে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন শিক্ষা ক্যাডারের ‘সমিতিবাজ’ ও ‘যে কোনো মূল্যে বড় পদ বাগানোর’ মানসিকতা সম্পন্ন কতিপয় কর্মকর্তা। আর এ বিষয়টিই শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র ও রুচিশীল কর্মকর্তাদের মর্মবেদনার কারণ বলে জানা গেছে। তারা আক্ষেপ করেছেন দৈনিক শিক্ষার সঙ্গে।
গভীর মনঃকষ্ট নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন, গত ছয়মাস ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসে ঘুরঘুর করা এই অধ্যক্ষ বাড়ৈ সিন্ডিকেটেরই নতুন অপারেশনাল কমাণ্ডার।