‘জাতীয় সংগীত—একটি পবিত্র বোধ’ - দৈনিকশিক্ষা

‘জাতীয় সংগীত—একটি পবিত্র বোধ’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আজকাল একটা কথা প্রায়ই শুনতে পাই, ‘অমুকে ওই কথাটি ঠিক বুঝে বলেনি।’ একজন সাধারণ মানুষ যখন কোনো কিছু একটা না বুঝে বলে ফেলে, তখন তাকে গুরুত্ব না দিলেও চলে তিনটে কারণে—এক. তার বক্তব্যটি হতে পারে একেবারেই অজ্ঞতাপ্রসূত; দুই. তার কথা কারো দৃষ্টিগোচর এবং মননগোচর হওয়ার সম্ভাবনা বড়ই ক্ষীণ; তিন. তার না বুঝে বলার ফলে মানুষ, সমাজ ও জাতির ক্ষতি হবে না। শনিবার (১০ আগস্ট) বণিকবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন সেলিম জাহান।

কিন্তু মানুষ যখন একটা জায়গায় পৌঁছে যায়—ক্ষমতা, দায়িত্ব, শ্রদ্ধা, সম্মান, প্রতিনিধিত্ব ও জননন্দনের ক্ষেত্রে—তখন কিন্তু কথিত বক্তব্যের ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও পরিমিতি চলে আসে। তখন ‘না বুঝে বলার’ কোনো সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বুঝে বলতে হবে। বলার আগে বুঝতে হবে। না বুঝলে বুঝে নিতে হবে। মুখ খোলার আগে বোধ খুলতে হবে।

যেমন চলমান ডেঙ্গুর কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে পথচলতি একজন মানুষ তার যা মনে হয়, তা বলতে পারেন। তার দায়বদ্ধতা বড় কম। কিন্তু একজন ডাক্তার যখন কোনো কথা বলছেন কিংবা একজন সরকারি কর্মকর্তা যখন কোনো মতামত দিচ্ছেন, তখন সেটা শুধু তার কথা থাকে না। তাদের কথা, তাদের পরামর্শ, তাদের মতামত লোকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে, সে অনুসারে কাজ করে। দায়িত্বহীন কোনো কথা, পরামর্শ বা মতামত দিলে নানা জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সুতরাং সেখানে না বুঝে বলার কোনো সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কিছু বলার আগে বুঝে নিতে হবে সবকিছু।

উপর্যুক্ত কথাগুলো যেমন ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এবং সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি সত্য একটি দেশের জাতীয় সংগীত ও একজন জনপরিচিত গায়কের ক্ষেত্রেও। একটি দেশের সব মানুষেরই শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা তাদের দেশের জাতীয় সংগীতের প্রতি। সে রকম একটি পবিত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একজন জনপরিচিত গায়ক যখন জাতীয় সংগীতের সঙ্গে অন্য একটি গানের তুলনামূলক বিচার করে অন্য গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেশি অর্থবহ বলে উল্লেখ করেন, তখন তা আর তার নিজের কথা থাকে না এবং সে দায়িত্বহীন মন্তব্যকে ‘না বুঝে বলার’ মোড়কে পেঁচিয়ে রাখা যায় না। বক্তব্যটি যদি নিছক কোনো গান নিয়ে হতো, তাহলে হয়তো বিষয়টি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও চলত। কিন্তু কথিত বক্তব্যটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে এবং স্পর্শকাতরতাটি সেখানেই।

সমস্যা হচ্ছে, এ-জাতীয় দায়িত্বহীন মন্তব্যকে মূলধন করেই নানা অপশক্তি নানা অপচেষ্টা চালায়, নানা ষড়যন্ত্রে মাতে। জানা কথা, অপশক্তিরা তাদের হীন ষড়যন্ত্রে অন্যকে সততই ব্যবহার করে। আইয়ুব আমলে আরবি হরফে বাংলা লেখা ও রবীন্দ্রসংগীত বর্জনের অপচেষ্টার ক্ষেত্রেও এটা দেখা গেছে। স্বস্তির কথা যে তখন জ্ঞানতাপস অধ্যাপক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জননী সাহসিকা বেগম সুফিয়া কামাল, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর মতো মানুষদের নেতৃত্বে এসব অপপ্রয়াস বানচাল করে দেয়া হয়।

আমাদের জাতীয় সংগীতের ওপরও আঘাত হানার অপপ্রয়াস নতুন নয়। ১৯৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর মোশতাক সরকার কাজী দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে একটি পর্ষদ গঠন করেছিল বিকল্প জাতীয় সংগীতের জন্য। জিয়াউর রহমানের শাসনকালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে প্রস্তাব করেন মন্ত্রিপরিষদকে দেয়া এক চিঠিতে। তার যুক্তি ছিল, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের নাগরিক নন এবং হিন্দু কবির লেখা জাতীয় সংগীত মুসলিম উম্মাহর পরিপন্থী।

২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তত্কালীন মন্ত্রিসভার সদস্য মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের সুপারিশ করে একটি পত্র পাঠান। তাতে লেখা ছিল যে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে জাতীয় সংগীত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন।

আজকের সময়ে যখন নানা অপশক্তি নানা বিষয়ে তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে তত্পর, তখন ‘না বুঝে বলার’ বিষয়টি হালকাভাবে নেয়া যায় না। বিশেষত যেখানে বলা হয়েছে যে কথিত গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করার সপক্ষে মিছিল বেরিয়েছিল। তাই বিষয়টি যখন জাতীয় সংগীতের মতো গুরুতর ব্যাপার, তখন তা নিশ্চিতভাবে খতিয়ে দেখতে হবে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে, মূল্যায়ন করতে হবে সার্বিকভাবে, সতর্কও থাকতে হবে সবাইকে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমাদের প্রাণপ্রিয় এবং তার ক্ষতি করার সব অপপ্রয়াস নস্যাৎ করা হবে, যেমনটি হয়েছে অতীতে। সেই পরিপ্রেক্ষিত থেকেই রচিত বর্তমান লেখাটি, অন্য কিছু নয়।

লেখক : ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036120414733887