‘থ্রি-সি’ ফর্মুলায় জাপান : লকডাউন-গণপরীক্ষা নয় - দৈনিকশিক্ষা

‘থ্রি-সি’ ফর্মুলায় জাপান : লকডাউন-গণপরীক্ষা নয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা যখন কমতে কমতে একশোর নিচে নেমে এসেছে, তখন জাপান জরুরি অবস্থা থেকে পুরো মুক্ত হয়েছে। সোমবার ২৫ মে জাপান জরুরি অবস্থা পুরোপুরি তুলে নিয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে জাপান সফল বলে অভিহিত করেছেন গবেষকরা। কিন্তু লকডাউন ও গণপরীক্ষা ছাড়াই এই সফলতার সূত্র কি- সে প্রসঙ্গে টাইম ডটকমের এক প্রতিবেদন বলছে ‘থ্রি-সি’ ফর্মুলার কথা।

‘থ্রি- সি’  ফর্মুলা হল, ‘ক্লোজড স্পেস’, ‘ক্রাউডেড স্পেস’ এবং ‘ক্লোজড কনট্যাক্ট’ থেকে দূরে থাকা।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনা ভাইরাস মহামারি ঠেকাতে মানুষকে ঘরে অবরুদ্ধ রাখা ও যত বেশি সংখ্যক সম্ভব নমুনা পরীক্ষা করাই প্রধান কৌশল হয়ে উঠলেও জাপান এগুলোর কিছুই করেনি।

মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বড় কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি দেশটি; খোলা ছিল রেস্তোরাঁ, এমনকি সেলুনও। সংক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপে নির্ভরশীলতা বাড়লেও প্রযুক্তির দেশ জাপান তাও মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়নি।

জাপান এখনও পর্যন্ত শূণ্য দশমিক দুই শতাংশ পরীক্ষা চালিয়েছে; অর্থ্যাৎ নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যানেও বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশ।   

তারপরও কী করে ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিদিনের চিত্র নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে জাপান তা তুলে ধরেছে টাইম ডটকমের এক প্রতিবেদন।  

বিশ্বের অনেক দেশের মত জাপানে নেই কোনো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানও; তবু জাপানে মোট মৃত্যু এক হাজারের নিচে রয়েছে। টোকিওর মত ঘনবসতির শহরেও নতুন রোগী শনাক্তের সূচক দিন দিন পড়তির দিকে।

ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় দফার ধাক্কা আসার আশংকার মধ্যেই জাপান মাত্র কয়েক সপ্তাহের জরুরি অবস্থা তুলে নিতে শুরু করে। সব শেষ সোমবার (২৫ মে) পুরো দেশ আপাতত জরুরি অবস্থা মুক্ত হয়। তবে ফের জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনা রয়ে গেছে।

ওয়াসেডা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ভাইরাস বিষয়ক এক পরামর্শক সংগঠনের বিশেষজ্ঞ মিকিহিতো তানাকা বলেন, শুধু মৃত্যুর সংখ্যা দিয়েও জাপানকে সফল মানা যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট কি কারণে এই সফলতা তা তিনি জানেন না।

সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যমে মহামারি নিয়ন্ত্রণে জাপানের সফলতার ৪৩টি সম্ভাব্য দিক তুলে ধরা হয়। যেগুলোর মধ্যে মাস্ক পরে চলাফেরা, মানুষের মধ্যে স্থুলতা না থাকা অথবা দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

জাপানি ভাষায় কথা বলার সময় মুখ থেকে থুথু কম ছিটে বলে ভাইরাস ছড়ানোর আশংকাও কম থাকে বলে মজাদার ধারণাও পোষণ করছেন অনেকে।  

কন্টাক্ট ট্রেসিং:

মহামারির বিস্তার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। জাপান এই কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে জোর না দিলেও তার ছিল সংক্রমণ শনাক্তে প্রশিক্ষিত অর্ধ লাখ জনবল, যা অন্য কোনো দেশের নেই।

জাপানে পাবলিক হেলথ সেন্টারে এখন ৫০ হাজার নার্স কাজ করছেন, যারা সংক্রমণ শনাক্তে প্রশিক্ষিত। অন্য সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও যক্ষ্মার সংক্রমণ শনাক্ত করাই ছিল তাদের কাজ। এপ্রিলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে তাদের সবাইকে কাজে লাগাচ্ছে জাপান।

হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাজুতো সুজুকি জাপানের এই পদক্ষেপের বিষয়ে বলেন, সিংগাপুরের মতো এটা অ্যাপনির্ভর কোনো কিছু নয়। তবে মানতেই হবে, এটা কাজে দিয়েছে বেশ।

টাইম বলছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সবে কন্টাক্ট ট্রেসার নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হতেই জাপান তার এই স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে লাগিয়েছে।

জাপানের প্রশিক্ষিত জনবল কোনো লোকালয়ে গুচ্ছ সংক্রমণ অথবা ক্লাব ও হাসপাতাল থেকে কয়েকজনের মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার তথ্যগুলোর খুঁটিনাটি দিক নিয়ে কাজ করে।

জাপানে আলাদা করে কোনো সংক্রামণ রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা না থাকলেও পাবলিক হেলথ সেন্টার তার অভাববোধ করতে দেয়নি বলে অধ্যাপক কাজুতো মনে করেন।

‘থ্রি- সি’ ফর্মুলা:

ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়া প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ঘটনাকে হালকাভাবে নেয়নি জাপান। ঘটনার পর থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।

অধ্যাপক মিকিহিতো বলেন, “জাপানের জন্য ওই ঘটনা ঘরের ঠিক বাইরে রাখা গাড়িটির আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো ছিল।”

কিন্তু সবাইকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন না রেখে  তিনটি সূত্র  (‘থ্রি- সি’) মেনে কাজ করেছে জাপান: ‘ক্লোজড স্পেস’, ‘ক্রাউডেড স্পেস’ এবং ‘ক্লোজড কনট্যাক্ট’ থেকে দূরে থাকা।

বিশ্বজুড়ে সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের মধ্যেই জাপানের এই সূত্রকে অনেক বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুজুকি।

করোনাভাইরাসের ভিন্ন স্ট্রেইন:

মে মাসের গোড়ার দিকে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ডেটাবেইজে করোনাভাইরাসের অনেক ধরন পরীক্ষা করে দেখেছেন, ইউরোপজুড়ে ভাইরাসের একটি স্ট্রেইন ছড়িয়েছে; যা এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের স্ট্রেইন থেকে কিছুটা আলাদা। তবে এই গবেষণা এখনও যাচাই-বাছাই হয়নি।

গত এপ্রিলে টোকিও শহরের এক হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত নয় এমন কয়েকজন রোগীকে পরীক্ষায় দেখা যায়, তাদের মধ্যে সাত শতাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এর অর্থ যাদের কোনো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে না বা মৃদু অসুস্থতা রয়েছে তারাও মহামারির মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে পারেন।

এর মধ্যে ৫০০ লোকের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ফলাফল থেকে অনেকেই অনুমান করছেন, সংক্রমণের বর্তমান যে পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা এর থেকে ২০ গুণ বেশি হবে।

আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে জাপানের ম্যানুয়াল কনট্যাক্ট ট্রেসিং পদ্ধতি কাজে দেবেনা, বলছে টাইম ডটকমের ওই প্রতিবেদন।

১১ দেশে ভ্রমণকারিদের জাপানে ঢোকা নিষেধ:

নতুন করোনাভাইরাস জনিত কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতা বাড়িয়েছে জাপান।  সাম্প্রতিক সময়ে যারা বাংলাদেশসহ ১১টি দেশ ভ্রমণ করেছেন, তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাপান।
অন্য দেশগুলো হল- আফগানিস্তান, আর্জেন্টিনা, এর সালভাদর, ঘানা, গিনি, ভারত, কিরঘিজস্তান, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তাজিকিস্তান।

বিদেশি যারা দুই সপ্তাহের মধ্যে এসব দেশে অবস্থান করেছেন, তাদেরকে জাপানে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালায়। ২৭ মে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এ নিয়ে মোট ১১১টি দেশ থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করল জাপান। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সব দেশ রয়েছে। চীনের হুবেই অথবা ঝেজিয়াং প্রদেশ থেকে চীনা পাসপোর্টধারী বিদেশি এবং নতুন ভাইরাসের সংক্রমণে কবলে পড়া ওয়েস্টারডাম জাহাজে যারা ভ্রমণ করেছেন, তারাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। এনএমএস

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032079219818115