একটি গবেষণাকে উদৃত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ড. মুহম্মাদ মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ১৭ ভাগ মানুষ কোননা কোন মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ পাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও ৯২ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
রোববার (১০ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি এবং ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে চার দিন ব্যাপি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সকালে এ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. সায়েদুল ইসলাম। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম শামীম আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান জোবেদা খাতুন, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ড. মুহম্মাদ মাহমুদুর রহমান।
ওয়েবিনারের মূল প্রবেন্ধ ড. মুহম্মাদ মাহমুদুর রহমান বলেন আমরা দু’ধরণের বৈষম্যের সন্ধান পাই: প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুক্তভোগী এক বিশাল সংখ্যা যথাযথ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা জনিত বৈষম্য, এবং দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নীতিমালার ফলে সৃষ্ট একই দেশের বিভিন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর্থ সামাজিক বৈষম্য, জীবন যাত্রার সব চাহিদা ও মান বজার রাখার অক্ষমতা, ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপ বৃদ্ধি এবং নানা প্রকার মানসিক সংকটে ভোগা ও সংকটপূর্ণ জীবনযাপন।
তিনি আরও বলেন ঐতিহাসিকভাবে বিচার করলে এটা দেখা যায় যে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটিকে সর্বদাই কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে একটি বিরাট সংখ্যক মানসিক সমস্যা বা অসুস্থতায় আক্রান্ত মানুষদের সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা বঞ্চিত থেকে দিনের পর ভোগান্তি, যা তাদের জীবন যাত্রার মানকে নিম্নস্তরে নামিয়ে রেখেছে। কোভিড-১৯ মহামারির আর্থ-সামাজিক প্রভাবেও দেখা গেছে যে, দারিদ্র ও বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকোপও অতিমাত্রায় বেড়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ১৭ ভাগ মানুষ কোননা কোন মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ পাচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও ৯২ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি দূর করতে একদিকে যেমন বাড়াতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার মান, তেমনি অন্যদিকে মানসিক চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যহানির গভীর কারণগুলো দূর করার জন্য নিতে হবে গবেষণালব্ধ কার্যকর স্ট্রাটেজি। যেখানে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য হতে হবে আগামী দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে দেশে মানসিক রোগীর হার ৭ শতাংশে এ নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।