‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে ঢাবির সিনেট অধিবেশনে হট্টগোল - দৈনিকশিক্ষা

‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে ঢাবির সিনেট অধিবেশনে হট্টগোল

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বিএনপিপন্থী এক সদস্যের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী সিনেট সদস্যরা। সরকারি কর্মকর্তা ক্যাটাগরিতে সিনেট সদস্য হিসেবে অধিবেশনে অংশ নেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ মিয়ার সঙ্গেও তুমুল বিতর্কে জড়ান শিক্ষকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত অধিবেশন চলে।

সিনেট সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম তাঁর বক্তব্য শেষে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন। এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তব্যের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ অংশটি প্রত্যাহার করার দাবি জানান আওয়ামীপন্থী নীল দলের নেতা ও সিনেট সদস্য আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া। উপাচার্য সঙ্গে সঙ্গে বক্তব্যের ওই অংশটি প্রত্যাহার করেন।

ওবায়দুল ইসলামের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ভিন্নমতাবলম্বী কারও কথা বলার জায়গা নেই। তাঁরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার সমান সুযোগ পাওয়া উচিত।

এরপর সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান কাম্য হতে পারে না। সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সিনেটে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এটি এখানে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপিপন্থী শিক্ষকনেতা মামুন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান বাংলাদেশে কবে থেকে বন্ধ করা হয়েছে?’ এ প্রশ্নের পর শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে হট্টগোল। মিনিট পাঁচেক হট্টগোল চলে। এরপর বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের উদ্দেশে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ পাকিস্তানি ভাবধারার স্লোগান। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক ভাবধারার অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা। সিনেটে এটি গ্রহণ করা হলো না। এই সভা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

শিক্ষক-আমলা বিতর্ক
সরকারি কর্মকর্তা ক্যাটাগরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে অংশ নেওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ মিয়ার সঙ্গেও তুমুল বিতর্কে জড়ান শিক্ষকেরা। বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষকদের সম্পর্কে তাঁর কিছু মন্তব্যের পরই উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর তাঁর বক্তব্যের যে অংশ নিয়ে আপত্তি সেই অংশটুকু প্রত্যাহার করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

অধিবেশনে অংশ নিয়ে আবু ইউসুফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোনো প্রভিশন বাজেটে নেই। এটি মনে হয় থাকা উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ব্যানবেইসের মাধ্যমে প্রতিবছর গবেষণার জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আমি এর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। সেই ৩০ কোটি টাকা কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। মানে, আপনারা চাইতে পারছেন না। অনেক উপাচার্য আমাকে বলেছেন, তাঁদের যে তহবিল থাকে, সেটাও ব্যয় হয় না। বাজেটে বরাদ্দ থাকার পরও কেন খরচ হচ্ছে না, এটা আমাদের ভাবতে হবে।’

আবু ইউসুফ আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। আমাদের ছাত্রজীবনে শিক্ষকেরা যেভাবে ক্লাস নিতেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আমার ছেলে ও মেয়েরা বলে, যখন যে কয়টা ক্লাস নেওয়া দরকার, শিক্ষকেরা তা সব একদিনে নিচ্ছেন।’

এ সময় জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন এ কে এম মাহবুব হাসান চিৎকার করেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে, শিক্ষকেরা যথাসময়ে যথাযথভাবে ক্লাস নিচ্ছেন। কোনো শিক্ষার্থী বলতে পারবে না যে শিক্ষকেরা সময়মতো ক্লাস নিচ্ছেন না। শিক্ষকদের নিয়ে আবু ইউসুফ মিয়ার ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হোক।’

সিনেট সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া ও অন্যরা এ সময় বলতে শুরু করেন, আপনারা আমাদের জ্ঞান দিতে আসবেন না। আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলে। মিনিট পাঁচেক উত্তেজনা চলার পর উপাচার্য আবু ইউসুফের বক্তব্যের ওই অংশ প্রত্যাহার করেন। একপর্যায়ে আবু ইউসুফ আবারও কথা বলতে গেলে উপাচার্য তাঁকে থামতে বলেন। তখন তিনি থেমে যান।

সংসদ সদস্য ক্যাটাগরিতে সিনেট অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এই উত্তেজনাকে ইঙ্গিত করে আর এ এম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় সংসদ আর এই সংসদের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনি। একটু পার্থক্য বোধ হয় থাকা উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮২২ কোটি ৪১ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার নতুন বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। নতুন বাজেটটি টাকার অঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই সংশোধিত ও নতুন বাজেট অনুমোদিত হয়।

সিনেট অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। প্রায় ৮ ঘণ্টা বাজেটের ওপর আলোচনা হয়। তাতে অংশ নেন সিনেটের অর্ধশতাধিক সদস্য। এরপর রাত পৌনে ১১টায় বাজেট অনুমোদিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারের কাছে বিশেষ মর্যাদা দাবি করেন সিনেট সদস্য খন্দকার বজলুল হক। এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানান নিজামুল হক ভূঁইয়া। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি সরানোর উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও তোলেন নিজামুল হক।

সিনেট সদস্য আফতাব আলী শেখ গবেষণা বাজেট কমপক্ষে ১০ শতাংশ করার আহ্বান জানান।

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার, শব্দদূষণ রোধ ও শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়াক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানান মিহির লাল সাহা। এ ছাড়া, আরও দুটি ছাত্রী হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান সিনেট সদস্য লাফিফা জামাল।

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051641464233398