‘সিন্ডিকেটই ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করছে’ - Dainikshiksha

‘সিন্ডিকেটই ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করছে’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে চলছে পাল্টা কাদা ছোড়াছুড়ি। বর্তমান নেতারা বলছেন সিন্ডিকেটের কথা।আর সাবেকরা দুষছেন বর্তমান নেতৃত্বকে। তাদের বক্তব্য- ছাত্রলীগের এই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীনতা-ই দায়ী।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন ভিন্নকথা। তার ভাষ্য- ছাত্রলীগে দীর্ঘদিনের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে, তারাই নানাভাবে সংগঠনকে বিতর্কিত করার জন্য এসব চক্রান্ত করছে। তবে কারা এই সিন্ডিকেট চালান সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

এসব বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংকট বেড়েই চলেছে। ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা অর্ধশত নেতার বাদপড়াই এ সংকটের মূল কারণ। বাদপড়া এসব নেতার সঙ্গে যোগ হয়েছেন প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া আরও অন্তত ১০ কেন্দ্রীয় নেতা।

তারা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানো এবং পদপ্রাপ্তিতে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বনের অভিযোগ এনেছেন। নবগঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে নতুন কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতা ও তাদের অনুসারীদের হামলার শিকারও হয়েছেন তারা।

এর পরও বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ আনতে শুরু করেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। ফলে সংগঠনটিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আস্থাহীনতা, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ক্রমশই বাড়ছে।

সোমবার সম্মেলনের এক বছর পর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ওইদিনই শুরু হয় বিক্ষোভ। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথাও হয় তাদের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে গণমাধ্যম সব জায়গায় বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা এবং নবগঠিত কমিটিতে পদ পাওয়া শতাধিক বিতর্কিত নেতাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে সরব হন তারা।

চাপের মুখে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বুধবার ১৭ জন বিতর্কিত নেতার একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পদগুলো শূন্য ঘোষণা করে বঞ্চিতদের পদায়নের ঘোষণা আসে।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের ভেতরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা থাকলেও শনিবারেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি ছাত্রলীগ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন তারা। এদিকে পদবঞ্চিত নেতাদের এমন আন্দোলনের মুখে শনিবার থেকে তাদের বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ আনেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুপক্ষের এমন অবস্থানের ফলে সংগঠনে আস্থাহীনতা ও বিদ্বেষ ক্রমশই বাড়ছে। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সংগঠনের দীর্ঘদিনের সৌহার্দ ও সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।

সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জুনিয়র নেতারা কটাক্ষ করে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনাও ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে।

পদপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ-অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও ব্যক্তিগত আক্রোশের জের ধরে নিরপরাধ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজনীতি করা অনেককে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সংগঠনের নারী নেত্রীদের বিরুদ্ধেও চলছে ক্রমাগত ব্যক্তিগত আক্রমণ।

সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এদিকে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতার সঙ্গে ফের সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এসব বিষয় জানিয়ে ডাকসুর সদস্য ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির অর্থবিষয়ক উপসম্পাদক (নবগঠিত কমিটির সাংস্কৃতিকবিষয়ক উপসম্পাদক) তিলোত্তমা সিকদার বলেন, ছাত্রলীগে কোনো অপরাধীর স্থান হবে না। মন থেকে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করবে তারাই ছাত্রলীগ করবে। সে জন্যই আমরা আন্দোলন করছি। আমরা অপরাধীদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্টদের কাছে যাব। এর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হলে আন্দোলন চলবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। অথচ নির্ধারিত সময়ের ৭২ ঘণ্টা পরও তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি তারা।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় শুক্রবার বিকালে  বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়াটি একটু সেনসেটিভ হওয়ায় কিছু বেশি সময় লেগেছে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে, খুব শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, এবারের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উদাসীনতা ছিল। যে কারণে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই কমিটি ঘোষণা করেছে।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী  বলেন, সংগঠনে কোনো ধরনের নোংরামি ও কাদা ছোড়াছুড়ি কাম্য নয়। আশা করছি সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। এ সময় তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিতর্কিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে যে অভিযোগ আসছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে সত্যিকারার্থে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় তারা কমিটিতে থাকতে পারবে না। মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনার তদন্ত এবং ১৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031890869140625