‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু গাড়িতে খুব দ্রুতই আগুন লেগে যাওয়াতে সব চেষ্টাই বৃথা যায়। চোখের সামনে এভাবে বন্ধুকে হারাব তা কখনো ভাবিনি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ঘটনাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ইরফান মুন্নার বন্ধুরা। গত রোববার (২৫ জুন) অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরির ডারউইনের লিচফিল্ড ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইরফান মুন্না ও তার ফিলিপিনো বান্ধবী রিসা ক্যারামায়। ঈদ ও নিজের জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য টলমার জলপ্রপাত যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন মুন্না ও তার সহযাত্রীরা। তবে সেই দুর্ঘটনায় প্রায় সবাই বেঁচে ফিরলেও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ইরফান মুন্না ও রিসা ক্যারামায়।
দুই বছর আগে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রকৌশল বিভাগে অধ্যয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে আসা ইরফান মুন্না। গত রোববার ডারউইনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়। ওই দিন মুন্নার জন্মদিনও ছিল। ঈদ ও জন্মদিনের সুবাদেই আনন্দ-উৎসব করার জন্য গাড়িযোগে টলমার জলপ্রপাত ঘুরতে যান মুন্না ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও আটজন শিক্ষার্থী।
বিকেল চারটা নাগাদ লিচফিল্ড ন্যাশনাল পার্ক অতিক্রম করার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে সবাই কম-বেশি আহত হন। পেছনের সিটে থাকা সহযাত্রীরা আহত অবস্থায় গাড়ি থেকে বের হতে পারলেও মুন্না ও রিসা বের হতে পারেননি। সিটবেল্টে আটকা পড়েন মুন্না ও তার পাশের সহযাত্রী রিসা। ইতিমধ্যে গাড়ির ইঞ্জিনের তাপে আশপাশের শুকনো ঝোপঝাড়ে আগুন লেগে যায়। অল্প সময়েই সেই আগুন গাড়িতেও লেগে যায়। মুন্নার বন্ধুরা তাদের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও আগুন সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়। ফলে ঘটনাস্থলেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন মুন্না ও তার বান্ধবী রিসা।
মুন্নার আরও কয়েকজন বন্ধু আরও দুটি গাড়িতে তাদের পিছু পিছু আসছিল। সেই গাড়ি দুটিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। যাত্রীরা অল্প আহত হলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ঘটনাস্থলে টেলিফোন নেটওয়ার্ক না থাকায় উদ্ধার প্রক্রিয়া কষ্টসাধ্য ও বিলম্বিত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজনকে অ্যাম্বুলেন্স হেলিকপ্টারে করে ডারউইন রয়্যাল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় শুকনো ঝোপঝাড়ের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। রাত ৯টায় সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এখনো ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে গাড়ির অতিরিক্ত গতিই এ দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করছেন নর্দান টেরিটরির রোড পুলিশিং ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট ম্যাট পার্শন্স। তার মতে, দুর্ঘটনার আগে ৮০ কিলোমিটার গতির রাস্তায় আরও ৩০ কিলোমিটার বেশি গতিতে চলছিল গাড়িটি।
এ সূত্র ধরেই নর্দান টেরিটরির উল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যম এনটিনিউজ.কম.এইউ এ সংবাদের ফলোআপ শিরোনাম করেছে, ‘গাড়ির গতিই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কারণ।’
সূত্র: এনটিনিউজ.কম.এইউ এবং নিউজ.কম.এইউ