এমপিওভুক্তদের হাহাকার - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তদের হাহাকার

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ |

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে দারুণ অনগ্রসর ও করুণ পেশাজীবীর আখ্যান হলো ‘বেসরকারি শিক্ষক’দের যাপিত জীবন। ওসব মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও অপেক্ষা যৌক্তিক হলেও তারা এখন হতাশ। তাদের হাহাকার এখন চরমে। শুনেছিলাম শিক্ষকদের দাবি আদায়ে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।

আশায় ছিলাম, হয়তো নির্বাচনের বছরে কিছু না কিছু জুটবে আমাদের ভাগ্যে। কারণ, বর্তমান সরকার স্বতন্ত্র বেতনস্কেলসহ অনেক আশ্বাসে আশ্বস্ত করেছিলেন শিক্ষকদের। এমন বাস্তবতায় সরকারের অনুগত শিক্ষক সংগঠনগুলো মাঠে-ময়দানে আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভরসা কোথায়? 

এমপিওভুক্তদের প্রত্যাশিত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতা নিয়ে জিজ্ঞাসার জবাব মিলছে না। ২০১৫ বেতন স্কেলের নিদের্শনায় রয়েছে নতুন করে পাঁচ বছর অন্তর বেতন স্কেল হবে না। বছর শেষে জুলাই মাসে জাতীয় বেতনস্কেলভুক্তগণ ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা পাবেন, যা চক্রবৃদ্ধি হারে অব্যাহত থাকবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা চালু হয়। অথচ জাতীয় বেতন স্কেলভুক্ত সবাই সুবিধা দু’টি এরই মধ্যে পেলেও বঞ্চিত রয়ে গেছেন কেবল এমপিওভুক্তগণ।

বেতনস্কেলে ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা যদি এমপিওভুক্তগণ না-ই পান, তবে কি তারা যে স্কেল ও সুবিধা পেয়ে চাকরিতে যোগ দেবেন শুধু সেটুকু নিয়েই অবসরে যাবেন? এমপিওভুক্তগণের কি বৈশাখী ভাতা বঞ্চিত হওয়াই কাম্য? অথচ তারাই ‘সোনা ছোঁয়া মাটির’ সৌরভ ছড়াতে গ্রাম-গ্রামান্তরে শিক্ষার দ্যুতিতে জাতীয় ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। 

একটি ‘জাতীয় লজ্জা’ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসবভাতা। দেশের প্রায় শতভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রারম্ভিক বেতনের ১০০ ভাগ রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাই বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা সিকিভাগ বা ২৫ শতাংশ উৎসবভাতা পান! এমপিওভুক্তদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পদের সবাই একই পরিমাণ ১০০০ টাকা বাড়িভাড়া পান। তারা বার্ষিক  ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতা, পদোন্নতি, স্বেচ্ছা অবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার।

অথচ ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের প্যারিস সন্মেলনে ১৩টি অধ্যায় ও ১৪৬টি ধারা-উপধারায় শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকারের জন্য প্রণীত সুপারিশে শিক্ষকের চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসেবা, ছুটি বেতন-ভাতা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বলা আছে (ক) সম্মানজনক পারিতোষিক নিশ্চিতকরণ (খ) যুক্তিসঙ্গত জীবনমান বিধানকল্পে সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ (গ) স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা (ঘ) জীবনধারণের ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও বর্ধিত বেতন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ইত্যাদি। 

ভাবতে অবাক লাগে, বেসরকারি শিক্ষকদের হাহাকার কেউ শোনেন না। ‘মানুষ গড়ার কারিগর’দের জীবনমান অনুন্নত থাকলে, কারিগরকে অভূক্ত ও অবহেলিত রাখলে জাতি হয়ে ওঠবে অবনমিত ও নিম্নগামী। এমন বাস্তবতায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন সুসংবাদের অপেক্ষায় বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীগণ। শিক্ষা মানুষের মৌলিকাধিকার। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। জাতিকে খাড়া-সোজা রাখার দায়িত্ব পালন করেন ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ অর্থাৎ ‘শিক্ষক’রাই। অথচ দেশের অভিন্ন সিলেবাসে পাঠদানকারী প্রায় শতভাগ বেসরকারি শিক্ষক নানান বঞ্চনার শিকার। 

সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কেননা, তিনি মানুষের কষ্টের কান্না সবচেয়ে বেশি টের পান। তিনি অত্যন্ত শিক্ষকদরদী ও তাদের প্রতি খুবই আন্তরিক। মাননীয় মন্ত্রী তোফায়েল আহমদও সংসদে শিক্ষা জাতীয়করণের আওয়াজ তুলেছিলেন।

পরিশেষে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এক ঘোষণায় শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। এ অপেক্ষা সারাদেশের সবার। পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। নির্বাচনের বছরে এমপিওভুক্তদের অধিকারের আওয়াজ যেন অনন্ত অপেক্ষা ও আক্ষেপে হারিয়ে না যায়। ভুলে গেলে চলবে না, দেশে এমপিওভুক্তদের সংখ্যা পাঁচ লাখ। তাদের আজ দারুণ কষ্ট পেয়ে বসেছে। তারা তাদের আশার পূর্ণতা চান।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া, গাজীপুর

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044450759887695