চলছে অনুমোদনহীন বিদেশি ভার্সিটির স্টাডি সেন্টার - দৈনিকশিক্ষা

চলছে অনুমোদনহীন বিদেশি ভার্সিটির স্টাডি সেন্টার

নিজামুল হক |

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেই অথচ পুরোদমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে অবৈধভাবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করছে একটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে চলছে। অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের সনদের বৈধতাও দেওয়া হবে না।

ধানমন্ডিতে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘ বিএসি ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টার’। অনুমোদনহীন এই সেন্টারে শিক্ষার্থী টানতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো লাগিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে। বিএসসি অনার্স ইন আইটি, বিবিএ, এলএলবি, এলএলএম, থ্রিডি ডিজাইন অ্যান্ড এনিমেশনসহ বিভিন্ন কোর্স অফার করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে। অনুমোদন না থাকায় এসব সনদের বৈধতা দেবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই জেনে শুনে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

২০১৪ সালে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা তৈরি করা হয়। এই বিধিমালায় বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি কমিশনের নিকট হইতে সাময়িক অনুমতিপত্র বা ক্ষেত্রমত সনদপত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করিতে পারিবে না।’ এ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানও অনুমোদন পায়নি।

তবে বিএসি স্টাডি সেন্টারটির চেয়ারম্যান  ড. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আইন মেনেই আমরা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আইনে বলা আছে, বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি’।

এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অনুমোদন ছাড়া যেসব শাখা ক্যাম্পাস এবং স্টাডি সেন্টার চলছে সেগুলো অবৈধ। এদের সনদের বৈধতা দেওয়া হবে না। একটি প্রতিষ্ঠানও অনুমোদন পায়নি বলে তিনি জানান। ৪টি আবেদন পাওয়ার পত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম, মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ধারা স্থগিত রাখতে বলেছে।

সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস এবং স্টাডি সেন্টার পরিচালনার জন্য ১৫টি আবেদন জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি।

ইউজিসির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড আপাতত স্থগিত রাখারও কথা বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, কোনো স্টাডি সেন্টার চালু থাকলে বিধিমালা অনুযায়ী তাদের কর্মকাণ্ড অবৈধ।

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুধু বিএসি ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টারই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দিচ্ছে যা অবৈধ ও বেআইনি। সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদনের আগে এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা বেআইনি। অথচ বিএসি ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টার অনুমোদনের আগেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এর আগে এডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড অস্ট্রেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টার নামে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির শাখা বাংলাদেশে খোলার জন্য ইউজিসিতে আবেদন করে। আবেদন করে এশিয়ান সেন্টার ফর ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনলোজি নামের প্রতিষ্ঠানটিও। তাদেরকেও অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়।

উত্সাহী ইউজিসি, ক্ষুদ্ধ মন্ত্রণালয়

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্পরতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৩টি স্টাডি সেন্টার অনুমোদনের আবেদন বাতিল করার পরও নতুন করে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির স্টাডি সেন্টারের অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিষয়টিতে বিরক্ত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি ইউনিভার্সিটির স্টাডি সেন্টার করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় পরীক্ষা করে দেখছে। ইতিমধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের না সূচক বার্তা দেওয়া হয়েছে’।

গত ১৫ নভেম্বর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে ফের ইউজিসি পত্র দেয়। ওই পত্রে আদালত অবমাননার বিষয়টিও সামনে আনা হয়। তবে মন্ত্রণালয় আগের সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্টাডি সেন্টারের ব্যাপারে আমরা তো না বলে দিয়েছি। এরপরও কেন বারবার চিঠি দিচ্ছে ইউজিসি। কাকে স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দিব? যারা আবেদন করেছে তাদের মূল মালিক কাউকে পাওয়া যায়নি’।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ৯৫টি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দিলে উচ্চশিক্ষায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এমনকি সনদ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037171840667725