ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন করলে সরকারের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আপীল বিভাগের রায়ের আলোকে সিদ্ধান্ত না নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ায় সরকারী কোষাগারের টাকা গচ্চা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানান তারা।
নাম না প্রকাশের শর্তে অধিদপ্তরের একজন পরিচালক দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, আপীল বিভাগের রায় না মেনে হাইকোর্টের রায় মানলে সরকার তথা শিক্ষা অধিদপ্তরকে আইনী ঝামেলায় পড়তে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে প্রজাতন্ত্রের অর্থের অপচয় ঠেকানো আমাদের দায়িত্ব। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার আদেশ পালন করে ভবিষ্যতে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের মুখোমুখি হতে চাই না।
জানা যায়, এমপিও না পাওয়ার শর্তে নিয়োগ পেয়ে বছরের পর বছর পাঠদান করে চলছেন ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় শিক্ষকরা। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবৈধ এমপিওভুক্তি, পরে স্থগিত ও ২৪টি রিট মামলা-মোকদ্দমা শেষে ফের তাদের এমপিওভুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে আজ ২০ নভেম্বর। ১৫৩ জন শিক্ষক অপেক্ষা করছেন এমপিও কমিটির আজকের সভার সিদ্ধান্তের জন্য। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাস্তবায়নে উদগ্রীব ‘ন’ আদ্যক্ষরের মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়ছে ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষকদের নিয়োগের দিন থেকে এমপিওভুক্ত করতে। কিন্তু সরকার ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে। দীর্ঘ শুনানিশেষে আপীল বিভাগের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, ১৫৩ জনের এমপিওভুক্তির বিষয়টি সরকারের বিচেনার বিষয়। সরকার চাইলে দিতে পারে না চাইলে না। কিন্তু আপীল বিভাগের রায় ও অধিদপ্তরের আইন উপদেষ্টার মতামত দেখেও না দেখার ভান করে ‘কিছুর’ বিনিময়ে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা । এই কর্মকর্তা আজকের এমপিও কমিটির সভায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এছাড়াও অধিদপ্তরের আইন শাখার আল আমিন সরকার ও আবুল কাসেম নামের দুইজন কর্মকর্তা সরকারের স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের আইন শাখার কর্মকর্তাদের এই মর্মে চুক্তি হয়েছে যে, নিয়োগের দিন থেকে এমপিওভুক্তি করিয়ে দিতে পারলে ৫০ শতাংশ টাকা কর্মকর্তাদের দিয়ে দেয়া হবে। হেলাল উদ্দিন নামের একজন সহকারি পরিচালকের হাতে এই ফাইলটি। তাকে গতকাল ১৯ নভেম্বর অন্য শাখায় বদলি করা হয়েছে।
জানা যায়, বেতনবিহীন থেকে অনেক শিক্ষক মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রাইভেট টিউশনি করছেন। আবার কেউ কেউ অন্য চাকুরিতে ঢুকে পড়েছেন আর তক্কে তক্কে থাকছেন কবে এমপিওভুক্ত হবেন।