গোপালগঞ্জে ধান কাটার শ্রমিকের সংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। যেখানে ধান মণ প্রতি ৭০০-৭৫০ টাকা সেখানে একজন শ্রমিকের মজুরি হিসেবে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা এখনো তাদের ইরি বোরো ফসলের পাঁকা ধান ঘরে উঠাতে পারেনি। স্থানীয় শ্রমিক ও বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের সংখ্যাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সৃষ্ট বাতাস ও বৃষ্টিতে বেশ কিছু জমির ধান গাছ পড়ে গিয়েছে। শ্রমিকের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ধান চাষীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমির ধান পেকে গেছে এবং বৃষ্টি ও বাতাসে বেশকিছু জমির ধানগাছ পড়ে মাটির সাথে মিশে আছে। ধান চাষীরা বলছেন, একটা শেষ হতে না হতেই আবার শোনা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় করিমের পদধ্বনী। ঈদের আগে থেকে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করলেও বেশিরভাগ কৃষকের ধান শ্রমিকের অভাবে মাঠেই পড়ে আছে। তাই কষ্টের ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ধানের মূল্যের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকায় কৃষকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে।পরুষের পাশাপাশি মহিলারাও এখন ধান কাটছেন এবং বয়ে বাড়িতে আনছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০ হাজার ৭১৬ হেক্টর, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর,মুকসুদপুর উপজেলায় ১৩ হাজার ২৬৩ হেক্টর, কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর ও কাশিয়ানী উপজেলায় ১২ হাজার ২৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। হাইব্রিড জাতের ধান বিঘা প্রতি ৫০ মন ও উফসি জাতের ধান ৩৫ মণ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কৃষকেরা ঘরে উঠেছে। সার ও অন্যান্য খরচ দিয়ে বিঘা প্রতি কৃষকের প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
শ্রমিক সংকটের কারণে বাকি ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। বর্তমান বাজারে ধানের মণপ্রতি ৭০০-৭৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে চাইলেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক।
টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রকিবুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দেড় বিঘা জমিতে আমি বোরো ধানের চাষ করেছি। ধান লাগানো থেকে কাটা পর্যন্ত শ্রমিক মূল্যসহ ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর ৩০ মন ধান বিক্রি করেছি ২১ হাজার টাকা। কয়েক মাস কষ্ট করে ধান চাষ করে লাভের পরিবর্তে আরও লোকসানে পরেছি। এভাবে যদি ধানের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকে তাহলে কৃষকেরা ধান চাষ থেকে আগ্রহ হারাবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক সুবোধ বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলাম। ধানের ফলন ভালো হলেও মূল্য কম। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের মূল্য একমন ধানের দামের চাইতে অনেক বেশি। এখন কিভাবে ধান কাটবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
কোটালীপাড়া উপজেলার বাগান উত্তরপাড়া গ্রামের জাহিদ মুন্সি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ৪ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। সব খরচ মিলিয়ে এবার লাভের মুখতো দেখবোই না বরং লোকসানে পরবো। তবুও ফসল ঘরে উঠানোর আশায় ধান কাটার শ্রমিক অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তাই আতঙ্কে দিন পার করছি।
কাশিয়ানী উপজেলার তালতলা গ্রামের তরুণ কান্তি বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, একদিকে যেমন ধান কাটার শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে শ্রমিক পাওয়া গেলেও জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। বর্তমানে ধান মনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা দরে। শ্রমিকের দাম মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকেরা। সরকার যদি ধানের ন্যয্যমূল্য নির্ধারণ না করেন তাহলে কৃষকদের বাঁচতে কষ্ট হবে।
মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও শ্রমিক সংকট রয়েছে। এবার শ্রমিকের মূল্য গতবারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.অরবিন্দ কুমার রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,এবছর জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অতি সম্প্রতি বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে কিছু জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে আবার অনেক জমিতে পানি জমেছে। ফলে ধান কাঁটতে শ্রমিকদের কষ্ট হচ্ছে। চাষীরা অবশ্যই ধানের ন্যয্য মূল্য পাবেন।