পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মত! - দৈনিকশিক্ষা

পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মত!

উবায়দুল্লাহ বাদল |

আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির দেয়া পিএইচডি ডিগ্রি সম্পর্কে দুই ধরনের মত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি শাখা! শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শাখা-১৭-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ‘আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।’ অন্যদিকে বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে এ মন্ত্রণালয়েরই শাখা-৮-এর। আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার জন্য এ শাখা থেকে নিজেদের কর্মকর্তাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টার থেকে পিএইচডি ডিগ্রিলাভ করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) ড. মালা খান। বিসিএসআইআর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি এ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন এবং ডিগ্রিলাভ করেন। এ জন্য তাকে অভিনন্দনও জানায় বিসিএসআইআর কর্তৃপক্ষ। এ ভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার বিষয়ে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতো বিসিএসআইআরও জেনে-শুনেই তাকে অনুমতি দেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বিসিএসআইআর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ইউনিভার্সিটির উচ্চতর ডিগ্রি দেয়ার সরকারি অনুমোদন আছে কিনা তা জানতে চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এরপর সেখান থেকে নেতিবাচক জবাব দেয়া হয়।

২০১৫ সালের ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শাখা-১৭ থেকে জানানো হয়- ‘আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন পর্যন্ত
পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলা বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অনুমোদন দেয়া হয়নি।’ লক্ষ্যণীয় যে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নয়। বাংলাদেশে এর কোনো শাখা নেই বা বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সহযোগী শিক্ষা কার্যক্রমও নেই। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার এখতিয়ার আছে কিনা তা ওই দেশের বিষয়। আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের নিজেদের কর্মকর্তাকেও অনুমতি দিয়েছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যাপক আলমগীর হোসেনকে নামের আগে ডক্টর ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের শাখা-৮-এর উপসচিব মালেকা খায়রুন্নেছা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে জনপ্রশাসন) শৃঙ্খলা-২(৫) অধিশাখা থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রবি-উর রেজা সিদ্দিকীকে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি কোর্স সম্পন্ন করার সম্মতি দেয়া হয়। এ শাখা থেকে ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের অনুমতি দেয়া হয় তৎকালীন ভূমি আপিল বোর্ডের সচিব শ্যামাপদ দে’কে।

একই বছরের ১৫ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সলিসিটর (রিট) মো. শাহজাহানকে এ প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করার অনুমতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও তাদের কর্মকর্তা এবং একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষককে আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার অনুমতি দিয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে একই মন্ত্রণালয়ের দুই শাখা কীভাবে ভিন্ন মত দিল জানতে চাইলে সঠিক জবাব দিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতর। শাখা-১৭-এর উপসচিব জিন্নাত রেহানা জানান, তারা মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করেন। শাখা-৮ এ বিষয়টি দেখভাল করে না। তারপরও তারা কীভাবে পিএইচডি ডিগ্রির সম্মতি দেয়, সেটা তিনি জানেন না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতির বিষয়েও একই মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।

পরে বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনিও উপসচিব জিন্নাত রেহানার বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, শাখা-৮ কিসের ভিত্তিতে ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি করার অনুমতি দিল তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাই বলতে পারবেন।
এরপর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শাখা-৮-এর তৎকালীন উপসচিব মালেকা খায়রুন্নেছার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যিনি বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। কিসের ভিত্তিতে আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়ে অনুমতি দিয়েছিলেন জানতে চাইলে মালেকা খায়রুন্নেছা বলেন, অনেক দিন আগের ঘটনা। তবে সম্ভবত সব কাগজপত্র ওকে (সঠিক) ছিল বলে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ের ‘কনসার্ন’ শাখা-১৭, আপনি কেন দিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এ উপসচিব বলেন, ‘ফাইলপত্র না দেখে কিছু বলতে পারব না। তবে যা কিছুই হয়েছে বিধিবিধান মেনেই করা হয়েছে।’

প্রায় অভিন্ন মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তাদের মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না থাকলে অসংখ্য কর্মকর্তা ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করত না। ইতিমধ্যে যাদের ডিগ্রির বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে বিসিএসআইআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মালা খান বুধবার বলেন, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে শত শত সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়ে ডিগ্রি অর্জন করছেন। যা কর্মক্ষেত্রেও গ্রহণ করা হচ্ছে। শুধু আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমার ডিগ্রি নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠান তদন্ত কমিটি করেও কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে কোনো অনিয়ম পায়নি। এ সংক্রান্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত ৪ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুদক।

জানা গেছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনুমোদিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে এর অনুমোদিত একটি স্টাডি সেন্টার রয়েছে, যা মূলত লিয়াজোঁ অফিস হিসেবে কাজ করে। ডিগ্রি সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেয়া হয়। এখান থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাদের ডিগ্রিও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক এগ্রো সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্নেহাংশু শেখর চন্দ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি শাখার সিনিয়র ক্যাটালগার মো. কামিম শাহরিয়ার, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্রনাথ বিশ্বাস প্রমুখ।

সৌজন্যে: যুগান্তর

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036780834197998