পিএইচডি: সরল গরল কথা - দৈনিকশিক্ষা

পিএইচডি: সরল গরল কথা

ড. রউফুল আলম |

পিএইচডি ডিগ্রিকে বাংলাদেশে যতটা বড় করে দেখা হয়, আসলে সেটা তেমন কিছুই না। পিএইচডি হলো গবেষণার হাতেখড়ি। এই সময়ে একজন মানুষ গবেষণা করার বিভিন্ন কলাকৌশল ও পদ্ধতি শেখে। অর্জিত গবেষণা–জ্ঞানকে পরবর্তীতে কর্মজীবনে প্রয়োগ করা হয়। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে গলায় ঝুলিয়ে রাখার কিছু নেই। কিংবা এই ডিগ্রি অর্জনই জীবনের শেষ কথা নয়। আমি যখন স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করি, তখন সকাল-বিকেল ৬০–৭০ জন সহকর্মীর সঙ্গে দেখা হতো। তারা সবাই পিএইচডি-পোস্টডক। ওই ডিপার্টমেন্ট চলতই শুধু গবেষক দিয়ে। সেসব ছেলে-মেয়েদের ৯০ শতাংশের বয়স ২৪-২৮ বছর।

গবেষণা একটা পেশা। এই ধারণাটা আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। গবেষণা যারা করেন, তাঁরাই গবেষক, উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী। যেহেতু এটা একটা পেশা, তাই এর শুরু করতে হয় কাঁচা যৌবন থেকেই। পিএইচডি হলো গবেষণার প্রাথমিক ধাপ মাত্র। পিএইচডি শেষে শুরু করতে হয় স্বতন্ত্র গবেষণা। তাই সারা দুনিয়ায়, ২২-২৩ বছরেই ছেলে-মেয়েরা পিএইচডি শুরু করেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নানান ত্রুটির কারণে, বহু শিক্ষার্থী চাইলেও সময়মতো সেটা শুরু করতে পারেন না।

পিএইচডির সময় একজন শিক্ষার্থী যে কয়েকটি বিষয় শেখেন—১. একটা প্রজেক্ট কি করে ডিজাইন করতে হয়। ২. সে প্রজেক্ট থেকে পর্যাপ্ত ও সন্তুষ্টজনক ফলাফল দাঁড় করানো। ৩. প্রজেক্ট শেষে সেটাকে আর্টিকেল আকারে লেখা ও প্রকাশ করা। ৪. নিজের কাজকে উপস্থাপন করা। ৫. ফান্ড/গ্রান্টের জন্য রিসার্চ প্রপোজাল লিখতে শেখা। এই বিষয়গুলো যত সঠিকভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে শেখা যায়, ততই ভবিষ্যতের পথ সুগম হয়।

পিএইচডির সময় ভালো জার্নালে পাবলিকেশনের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভালোভাবে কাজ শেখা। নতুন নতুন আইডিয়া উদ্ভাবন করতে শেখা। যেকোনো বিষয়কে বিভিন্নভাবে চিন্তা করতে পারা ও অসমাধানকৃত (Unsolved) বিষয়ের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা। কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে শেখা। মানুষ যখন একটা যৌক্তিক প্রশ্ন করতে যায়, তাকে সে বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে জানতে হয়। প্রশ্ন করার ক্ষমতা মানুষকে স্মার্ট করে।

পিএইচডির সময় সে বিষয়গুলো বেশি বেশি করতে হয়—১. নিজের গবেষণা ক্ষেত্রের (Research Area) প্রচুর আর্টিকেল পড়া। ২. খ্যাতনামা গবেষকদের কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ও বোঝা। ৩. সময় সুযোগ মতো বিজ্ঞানী ও বড় বড় গবেষকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা এবং তাদের লেকচার শোনা। ৪. সহকর্মীদের সঙ্গে প্রচুর আলোচনা করা। কেউ যখন অন্যের সঙ্গে আলোচনা করে, তখনই তার নিজের দুর্বলতা সহজে উপলব্ধি করতে পারে। গবেষণায় ইগো নিয়ে আত্মকেন্দ্রিক হওয়া বিনাশী ও আত্মঘাতী।

ডক্টরেট ডিগ্রিরও ভালো-খারাপ মান আছে। দুনিয়ার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান পিএইচডি দেয়। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভালো পড়াশোনা ও গবেষণা হয়। তাই প্রতিষ্ঠান ও গবেষকের খ্যাতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডক্টরেট ডিগ্রিতেও এখন প্রতারণা হয়। একবার এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হলো। বললেন, তিনি পিএইচডি করেছেন। তাকে প্রতিষ্ঠানের নাম জিজ্ঞেস করায় বললেন, তিনি অনলাইন থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি করেছেন! কী ভয়ংকর! অনলাইনের যুগে এই সব ডিগ্রি নিয়ে অনেকেই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। টাকা দিয়ে অনলাইন থেকে সার্টিফিকেট নিচ্ছে। সেটা ঝুলিয়ে রেখে সবাইকে প্রতারিত করছে।

যারা গবেষক হতে চাও, বিশেষ করে তাদের জন্য পরামর্শ হলো—১. যত দ্রুত সম্ভব পিএইচডি শুরু করতে হবে। ২. ব্যাচেলর বা মাস্টার্সেই গবেষণার হাতেখড়ি করতে হবে। ৩. গবেষণার ইচ্ছে থাকলে, ব্যাচেলর থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। ৪. যেকোনো বিষয় নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন করা শিখতে হবে। ৫. বেশি বেশি গবেষণা আর্টিকেল পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে।

পদোন্নতির জন্য কিংবা বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যারা পিএইচডি করেন তাদের বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। গবেষক হতে হলে পিএইচডি হলো সূচনা মাত্র। এই সূচনা হতে হবে সুন্দর। এর ভিত হতে হবে মজবুত। তাই বড় গবেষকের অধীন পিএইচডি করার লক্ষ্য ও চেষ্টা থাকতে হবে।

ড. রউফুল আলম: গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া (UPenn), যুক্তরাষ্ট্র।

সৌজন্যে: প্রথম আলো

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004472017288208