প্রাথমিকের সময়সূচি কমছে না কেন? - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিকের সময়সূচি কমছে না কেন?

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

আনন্দ, বেদনা ও ক্ষোভের মাঝে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা। বৈষম্যের বেড়াজালে অস্থিরতার মাঝে সময় কাটাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজ। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঊষালগ্নে প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করেন। সে সময় চারিদিকে ছিল ভয়াবহ অভাব। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ শিক্ষার চরম সংকট।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার শাহাদাতবরণের পরে সোনার বাংলা গড়ে তোলার অগ্রযাত্রা পিছনে ছুটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারিকরণের নীতি পরিবর্তন করে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় প্রাথমিক শিক্ষা। ৩ মাস ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ও ঐতিহাসিক মহাবিক্ষোভ করে প্রাথমিক শিক্ষার সরকারিকরণের অস্তিত্ব বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

প্রাথমিক শিক্ষকদের এত দীর্ঘ সময় আন্দোলন, আজকের দিনে শুধু কল্পনার স্বপ্নে ভেসে বেড়ায়। আজকের দিনে ৩ লাখ শিক্ষক পরিবারের ঐতিহাসিক মহাবিক্ষোভ আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে শুধু বিস্ময়। প্রত্যেক শিক্ষককে পরিবারের একজন বা একাধিক সাথীসহ শুকনা খাবার নিয়ে মহাবিক্ষোভে আসার নিদের্শনা ছিল। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার শিক্ষকদের পানি ক্রয় করে খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। সে সময় আমার ওপর ঢাকা ওয়াসা থেকে পানি কেনার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষকদের অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আজকের এ অবস্থা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। যার ফলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশে শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষার বিশাল অর্জনের পরেও বৈষম্য নিরসনে ইতিবাচক উদ্যোগ তেমন দৃশ্যমান নয়। প্রাথমিক শিক্ষকদের ২০১৪ খিষ্টাব্দ থেকে বেতন বৈষম্যের দাবি শুধু আশ্বাসে, হুমকি-ধামকি দিয়ে সময়ক্ষেপণ দৃশ্যমান হচ্ছে। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম স্কেল মনের আগুন কিঞ্চিত নিভানোর পরিবর্তে দাউদাউ করে জ্বলছে। বেতন নির্ধারণে অধিকাংশের পি.পি হয়ে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি থমকে দাড়াচ্ছে। এ যেন শুভঙ্করের ফাঁকি। সময়সূচি কমানোর নামে সৃষ্টি করা হচ্ছে এক অভূতপূর্ব বৈষম্য। একই কাজ, পদবি, বেতনস্কেল, সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষক। অথচ কারো ছুটি সোয়া ৩টায়, আর কারো ছুটি ৪টায়। এ বৈষম্য কত বছর চলবে? তাও কোন সঠিক নিদের্শনা নেই। অবকাঠামো নির্মাণসহ পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সময়সূচি সোয়া ৩টায় করার সিদ্ধান্ত মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্টদের। এ আরেক সময়ক্ষেপণের পালা। বিদ্যালয়ে শ্রেণির কার্যক্রমে প্রতি পিরিয়ডে শেষে ১০ মিনিট বিরতি। শিশুরা বিরতির সময়ে শিক্ষকের অনুপুস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে দৌড়াদৌড়ি বা হৈ চৈ করে থাকে। এতে যেকোন সময় দুঘর্টনা ঘটতে পারে।স্বাভাবিক ভাবে এর দায়ভার প্রথমে শিক্ষকের ওপর বর্তাবে। সংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিকভাবে দুঘর্টনার পর শিক্ষকদের দায়ী করতে একটুও কার্পণ্য করবে না। 

বর্তমানে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশে বৈষম্যমূলক ঘণ্টা চালু হলেও ঢাকা শহরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোঁয়া লাগেনি। সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে অবস্থান করেছে। অনতিবিলম্বে ঢাকা শহরের সময়সূচি নির্ধারণ করা দরকার। ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষার সাথে কিন্ডারগার্টেন, সরকারি-বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার সময়সূচির সাথে সামঞ্জস্য রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে সময়সূচি নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয়। 

ঢাকার বাইরের বিদ্যালয়গুলো সময়সূচি এক অভিন্ন রেখে সময়সূচির নতুন বৈষম্য দূর করা জরুরি। প্রতি পিরিয়ডের মাঝে ১০ মিনিট বিরতি না দিয়ে ২/৩ পিরিয়ড পর শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম যেমন- খেলাধুলা, নাচ, বিতর্ক, গান, আবৃতি, গল্পবলা, কোরান প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের কার্যক্রম চালু করা হোক। এতে শিশুরা অধিকতর বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে। ঝরেপড়ার হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। বিদ্যালয় হয়ে উঠবে শিশুর বিনোদনের আবাস। 

বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। অথচ প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন নতুন বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে চলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আনন্দঘন পরিবেশে শিশুদের শিক্ষার কথা বলে বলে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুটিনে সহ-পাঠ্যক্রমিক পাঠের কোন সুযোগ না থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার পরিপন্থি।

কিন্ডাগার্টেনসহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুর ওপর বইয়ের বোঝা কমানো, খেলাধুলা, বিনোদনের সুযোগ না রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে সকল শিশুর জন্য অভিন্ন (বই, কর্মঘণ্টা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি) আজকে শিশু শিক্ষার জন্য অতি জরুরি। শিশু শিক্ষায় বৈষম্য দূর হলে প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণের মহান নেতা জাতির জনকের আত্মা শান্তি পাবে, ঢাকাসহ সারা দেশে সময়সূচি এক ও অভিন্ন কর্মঘণ্টা হোক মুজিব বর্ষের প্রত্যাশা।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035181045532227