বন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী - দৈনিকশিক্ষা

বন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর মেডিকেল শিক্ষাজীবন শুরু করেন। মেডিকেল হোস্টেলের ওয়েস্ট ব্লকের তৃতীয় তলার ২০৫ নম্বর কক্ষে কেটেছে তাঁর ছাত্রজীবনের অনেকগুলো দিন। একজন রাষ্ট্রনায়কের জন্য তাঁর শিক্ষাজীবন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভেবে গর্ববোধ হয় যে বাংলাদেশেই শিক্ষাজীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের বন্ধু লোটে শেরিং। বাংলাদেশ থেকে নেওয়া ডিগ্রি তাঁকে মানুষ হিসেবে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। দেশে ফিরে কয়েক বছর চাকরি করে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বন্ধু ডান্ডি দর্জির প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। বলে রাখি, ডান্ডি দর্জি ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৪তম ব্যাচের ছাত্র।

লোটে শেরিং ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, নিয়মানুবর্তী ও কঠোর পরিশ্রমী। তিনি অবসরে টেবিল টেনিস খেলতে ও বেড়াতে ভালোবাসতেন। সার্জারি ওয়ার্ডে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালে তিনি আমাদের সঙ্গে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে পিকনিকে গিয়েছিলেন। সেই পিকনিকে নিজের হাতে লাকড়ির চুলায় রান্নাও করেছিলেন। তা ছাড়া গ্রীষ্মের ছুটির সময় তিনি একবার আমার সঙ্গে আমাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর লোটে শেরিংয়ের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আগমন উপলক্ষে ২৮তম ব্যাচের আমাদের ৭৭ জন বন্ধুর এক হওয়ার সুযোগ হলো। পয়লা বৈশাখে পুরোনো, প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে আবেগাপ্লুত হয়েছেন তিনি। তাঁর দেশে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের অগ্রাধিকার থাকবে সব সময়। নিজ দেশে এখনো তিনি সপ্তাহে দুদিন বিনা মূল্যে অস্ত্রোপচার করেন। নিজ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে তাঁর পরিকল্পনার কথাও আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। বললেন, চিকিৎসক পরিচয়েই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে চান।

২০২০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ম-২৮ ব্যাচের পুনর্মিলনী ভুটানে আয়োজন করার আশার কথা বলেন লোটে শেরিং। বন্ধুদের সঙ্গে সমাবেশের পর তিনি দুপুরের খাবার খান কলেজের কনফারেন্স রুমে। যেহেতু তিনি নিরামিষভোজী, খাবারের তালিকায় ছিল নানা রকম বাংলাদেশি সবজি। ভুটানের বাবুর্চি বিভিন্ন পদ রান্না করেছিলেন। কিন্তু তিনি ও তাঁর সঙ্গে আসা অতিথিরা খুব পরিতৃপ্তির সঙ্গে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের বাবুর্চির রান্না খেয়েছেন। তিনি যখন এখানকার ছাত্র ছিলেন, তখন যেসব কর্মচারী তাঁকে রান্না করে খাওয়াতেন, পরিচর্যা করতেন, তিনি তাঁদের সবাইকে ডেকে পাঠান, কুশল বিনিময় করেন ও কিছু অর্থ সাহায্য দেন। পরবর্তীকালে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৬ নম্বর ওয়ার্ড (সার্জারি ওয়ার্ড) পরিদর্শন করেন, যেখানে তিনি তাঁর জীবনের খুব সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন।

২০ বছরের ব্যবধানে অনেক কিছু বদলে গেলেও সহপাঠীদের সঙ্গে তাঁর আচরণ বদলায়নি। এসএসএফের কড়া নিরাপত্তা উপেক্ষা করে সহপাঠীদের সঙ্গে কাটানো এক ঘণ্টার বেশি সময় তিনি আগের মতোই গল্পগুজব ও আড্ডাবাজি করে কাটিয়েছেন। কত স্মৃতি মনে পড়ে গেছে! মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ২ নম্বর গ্যালারির প্রথম বেঞ্চের মাঝখানের দিকে তিনি নির্দিষ্ট একটি আসনে নিয়মিত বসতেন। পুরোনো বন্ধুরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে লোটে শেরিংয়ের নির্দিষ্ট আসনটি ফাঁকা রেখেছিলেন। সহপাঠীদের চমকে দিয়ে তিনি পুরোনো স্মৃতি মনে রেখে নিজের আসনটিতেই বসেন। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ২৮তম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট একটি জার্সি পরেন। লোটে শেরিং যখন আসেন, তখন তাঁকেও এই জার্সি উপহার দিলে অবলীলায় সেই জার্সি পরে নেন তিনি।

কড়া নিরাপত্তার কারণে আরও অনেক পরিকল্পনা থাকলেও সম্ভব হয়নি। লোটে শেরিং বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে আমার অনেক কথা ছিল। সময়ের অভাবে বলা হলো না।’ আমরা আমাদের বন্ধুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

লেখক: সাবেক ছাত্র (ম-২৬ ব্যাচ), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, বর্তমানে তিনি একই কলেজের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

সূত্র: প্রথম আলো

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034980773925781